বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগে বিপ্লব আনার লক্ষ্যে গঠিত ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রকল্প এখন নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে। নাসার এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, সূর্যের ক্রমবর্ধমান তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে স্টারলিংকের শত শত স্যাটেলাইট কক্ষপথ হারিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পতিত হচ্ছে।
গবেষণায় বলা হয়, সূর্য এখন তার ১১ বছর মেয়াদি সোলার সাইকেলের সর্বোচ্চ উত্তেজনায় পৌঁছেছে। এই সময়ে সূর্যের তীব্র সৌরঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ধাক্কা দেয়, যার ফলে বায়ুমণ্ডল প্রসারিত হয়ে নিচু কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের ওপর ঘর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। এ চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেক স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে নেমে আসে। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২৩টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২০২৪ সালেই পড়েছে ৩১৬টি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা ও হালকা এবং এদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কক্ষপথ স্থির রাখার জন্য খুব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়নি। ফলে সূর্যের অতিরিক্ত চাপ এলেই তারা নিয়ন্ত্রণ হারায়। যদিও স্যাটেলাইটগুলো বায়ুমণ্ডলে ঢুকেই পুড়ে যায়, কিন্তু তাদের পতনের অনিশ্চয়তা অন্যান্য মহাকাশযানের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন
বেইজিংভিত্তিক ‘অ্যারোস্পেস নলেজ’ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান বলেন, “সূর্যের সক্রিয়তা বাড়লে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, এতে নিচু কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলো বেশি ঘর্ষণের সম্মুখীন হয় এবং কক্ষপথ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।” ফলে মহাকাশে সংঘর্ষের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং নতুন উৎক্ষেপণকৃত স্যাটেলাইটগুলোর জন্য এটি বড় হুমকি তৈরি করে।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে মহাকাশকে নিরাপদ রাখতে হলে সূর্যের প্রাকৃতিক চক্র মাথায় রেখে স্যাটেলাইট ডিজাইন করতে হবে। নইলে প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে—যার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিকভাবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন যেমন জরুরি, তেমনি প্রকৃতির গতিবিধি বোঝাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।