সৌদি আরবে নিহত কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের মাহুতিকান্দা গ্রামের জামাল মিয়াকে হারিয়ে তার পরিবারটি এখন নি:স্ব। সে ওই গ্রামের মৃত গনি মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার নিহতের খবরে অন্ধকার নেমে আসে পরিবারটিতে।
ওই পরিবারে এখন আর উপার্জনক্ষম কেউ নেই। জামাল মিয়ার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী-সন্তানরা কেবলই হাউমাউ করে কাঁদছে। মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর পরিবারটির কান্নায় ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে মাহুতিকান্দা গ্রামসহ আশপাশের এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৌদীতে নিহত প্রবাসী জামাল মিয়ার মা ও নিহতের স্ত্রী এবং স্বজনেরা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ২ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিং সৌদী মেডিকেল সিটিতে জামাল মিয়া ইন্তিকাল করেন। তার সহকর্মীরা রোববার ফোনে তার স্ত্রীর কাছে ইন্তিকালের বিষয়টি জানায়। পুত্রহারা অসহায় মাতা মোমেনা খাতুন (৭৬) ছেলের লাশ তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে পেতে সরকারের কাছে দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন
বৃদ্ধা মা মোমেনা খাতুন আর্তনাদ করে জানান, কে আমার বুকের ধন জামালকে এনে দেবে? কে চালাবে তাদের সংসার? কিভাবে চলবে তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া? নিহত জামাল মিয়ার মেয়ে রামচন্দ্রপুর আকাব্বরের নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী আর্তনাদ করে বলে- বাবার কাছে একটি মোবাইল ফোন দাবি করলে তিনি বলেছিলেন- ভালোভাবে লেখাপড়া করলে এবং মায়ের কথা শুনলে আমাকে ভাল একটি মোবাইল ফোন কিনে দিবে।
নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৮) জানান, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে জায়গা জমি বিক্রি করে জামাল মিয়াকে ২০১৯ সালে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। সংসারের হাল ধরতেই জামাল মিয়া সৌদি আরবে যায়। আমরা গরীব হওয়ায় দেনা এখনো পরিশোধ করতে পারি নাই। ১৫ দিন আগে ফোনে আমার সাথে তার শেষ কথা হয়। তখন তিনি বলেন, অসুস্থ থাকায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারবে না। ছেলে মেয়েগুলোর দিকে খেয়াল রেখো। এখন আমার নাবালক ছেলে মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? আমার সংসার কে চালাবে এবং বৃদ্ধা শাশুড়ীকে কে দেখবে? এ জন্য এলাকাবাসীসহ প্রবাসীদের সহযোগিতা চান তিনি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। নিহতের লাশ দ্রুত দেশে আনার আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব ওই পরিবারকে সহায়তা দেয়া হবে।