গত এক দশকে সৌদি আরব মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে যে সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, তা ‘আতঙ্কজনক’ বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই কারণে প্রায় ৬০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যাদের সিংহভাগই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও মিসরের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে আগত অভিবাসীরাই সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০২১ ও ২০২২ সালে সাময়িক বিরতির পর ২০২৪ সালে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত ১১৮ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
অ্যামনেস্টির মতে, এই মৃত্যুদণ্ডের রায়গুলো বেশিরভাগই হয়েছে ‘অন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার’ মাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি খুবই সীমিত। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ডানা আহমেদ বলেন, “এ ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত নয়, আর আমরা বিশেষ করে বিদেশিদের ক্ষেত্রে এক ভয়ানক প্রবণতা দেখছি।”
আরও পড়ুন
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক দরিদ্র ও কম শিক্ষিত বিদেশি কাজের আশায় সৌদি আরবে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন এবং অল্প টাকার লোভে অপরাধমূলক চক্রের ফাঁদে পড়েন। উদাহরণস্বরূপ, সাতজন ইথিওপীয় এবং এক সোমালি নাগরিক ১৫৩ কেজি গাঁজা পাচারের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পান, অথচ তাদের প্রতিজনকে মাত্র ২৬৭ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
অ্যামনেস্টির অভিযোগ, অনেক অভিযুক্তকে আইনজীবী দেওয়া হয়নি, কূটনৈতিক সহায়তা ছিল সীমিত এবং বিচার চলাকালীন ভাষাগত সহযোগিতাও মেলেনি। এমনকি কয়েকটি ঘটনায় অভিযুক্তরা নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন। ভয়াবহভাবে, কারাবন্দীদের অনেকেই জানতেন না তাদের আপিলের অবস্থা কিংবা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ।
সংস্থাটির উপপরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন, “মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকারের পরিপন্থী, এটি নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর।” তিনি সৌদি আরবকে এই শাস্তি বন্ধে আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজকে কার্যকর চাপ প্রয়োগের অনুরোধ করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে সৌদি সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।