সম্প্রতি সৌদি আরবে একটি ভবনের কার্নিশে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর ছবি দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। পরে আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, একদল ব্যক্তি তাঁকে ক্রেনের মাধ্যমে নিচে নামিয়ে আনছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী সৌদি আরবের বিতর্কিত ‘দার আল-রেয়া’ পুনর্বাসন কেন্দ্রের একজন বন্দী ছিলেন। এসব কেন্দ্রে সাধারণত তাঁরা পাঠান, যাঁরা পরিবারের নিয়ম না মানেন, পালাতে চান বা সামাজিকভাবে “অবাধ্য” হিসেবে চিহ্নিত।
এই কেন্দ্রগুলোর বাস্তব চিত্র খুব একটা সামনে আসে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ছয় মাসব্যাপী তদন্তে জানতে পেরেছে, এসব স্থানে নারী ও কিশোরীদের বন্দি করে রাখা হয় বছরের পর বছর। তাঁদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, জোর করে নৈতিক আচরণ শেখানো হয় এবং বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ রাখা হয়। একাধিক নারী আত্মহত্যা করেছেন বা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলেও উঠে এসেছে।
নির্যাতনের শিকার এক নারী অধিকারকর্মী সারাহ আল-ইয়াহিয়া জানান, এসব কেন্দ্রে মেয়েদের নাম নয়, নম্বর দিয়ে ডাকা হয়—যেমন “নম্বর ৩৫ এখানে এসো।” প্রবেশের সময় তাঁদের কৌমার্য পরীক্ষা, নগ্ন দেহে তল্লাশি এবং ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য ওষুধ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক বন্দিনী জানান, সামান্য কথা বলার কারণেও তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়, কখনো কখনো সমকামিতার অপবাদ দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
আরও পড়ুন
এমনকি যারা এই নারীদের সহায়তা করতে চান, তাঁরাও হয়রানির শিকার হন। সারাহ বলেন, একজন নারী সহিংসতার শিকার এক নারীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু এ কারণে তাঁর ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। তিনি আরও জানান, অনেক সময় নারীদের বিয়ের মাধ্যমেই মুক্তির একমাত্র পথ খোলা হয়—এমনকি অপরাধী বা বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গেও।
সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই কেন্দ্রগুলো পরিবারে সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের আশ্রয় দিতে গড়ে তোলা হয়েছে, এবং সেখানে জোরপূর্বক কিছু করা হয় না। নারীরা যে কোনো সময় ইচ্ছায় বের হয়ে যেতে পারেন বলেও দাবি করা হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বক্তব্য ভিন্ন। তারা বলছে, নারীর অধিকার নিয়ে সৌদি সরকারের প্রচার ও বাস্তবতা একে অপরের বিপরীত।
২০৩৪ সালে পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতিতে সৌদি আরব নিজেদের সংস্কারমুখী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলেও, নারীদের উপর নিপীড়নের এমন চিত্র সেটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মহল।