ভালো ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছেড়ে লাখো বাংলাদেশি প্রতিবছর পাড়ি জমান বিদেশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জনশুমারি অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ, যার মধ্যে ২.১২ মিলিয়নের বেশি রয়েছেন সৌদি আরবে। তাদের প্রবাসজীবনের উদ্দেশ্য একটাই—পরিবারকে স্বচ্ছল রাখা ও দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।
ঈদ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বড় আনন্দের দিন, যা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কোলাকুলি, মিষ্টান্ন খাবার আর খোশমেজাজি আড্ডায় পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু প্রবাসজীবনের বাস্তবতায় এই চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত অধিকাংশ প্রবাসীরই ঈদের দিন ছুটি থাকে না, এমনকি অনেক সময় ঈদের নামাজে অংশ নেওয়ার সুযোগও হয় না।
সৌদি আরবের রিয়াদে কর্মরত প্রবাসী মোহাম্মদ মহসিন জানান, ঈদের আগের রাতে ক্লিনিকে নাইট শিফটে কাজ করার পর সকালে বাসায় ফেরার আগেই তাকে আবার ঈদের দিন সকাল সাতটায় কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার ঈদের সব প্রস্তুতি—নতুন পোশাক, সেমাই রান্না—অবশেষে অপূর্ণই থেকে যায়। সকাল থেকে বিকেল পার হলেও কাজ শেষে বাড়ি ফেরার অনুমতি মিলেনি। এমন বাস্তবতায় ঈদ তার জন্য শুধুই কর্মঘণ্টা; আনন্দের কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন
কেউ কেউ সৌভাগ্যবান, যারা মানবিক মালিক বা আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ঈদের কিছুটা আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। তবে সংখ্যাটা খুবই কম। বেশিরভাগ শ্রমজীবী প্রবাসীর কাছে ঈদের প্রকৃত অর্থ—একটি চাকরি পাওয়া, পরিবারে নিয়মিত টাকা পাঠানো এবং প্রিয়জনদের সুখে রাখা। এমনই একজন প্রবাসী হাসিব ভাই, যিনি বিগত সাত বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করছেন এবং প্রতিবছর পরিবারের জন্য ঈদে লাখ টাকা পাঠান, অথচ নিজেই পরেন পুরোনো জামা।
প্রবাসীদের ঈদের আনন্দ নির্ভর করে তাদের পরিবার ভালো আছে কি না, মাস শেষে টাকা পাঠাতে পারছে কি না, সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে কি না—এইসব খবরে। তারা বিলাসিতা নয়, বরং দায়িত্বপালনকেই ঈদের আনন্দ হিসেবে অনুভব করেন। বাস্তবতা হলো, প্রবাসে ঈদ মানে ব্যক্তিগত চাহিদা নয়, বরং পরিবারকে নিয়ে একটু ভালো থাকার চেষ্টা। আর সেটাই তাঁদের কাছে ঈদের প্রকৃত অর্থ।