সৌদি আরবের আকাশচুম্বী অট্টালিকা ও ব্যস্ত নগরজীবনের কোলাহল থেকে বহু দূরে, দেশটির উত্তর সীমান্তের মরুভূমিতে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী জীবনের গল্প। ৭০ বছর বয়সী রুকিয়া আল-রুওয়াইলি নামের এক নারী মৃত স্বামীর স্মৃতি ধরে রাখতে তাঁর রেখে যাওয়া উটগুলো নিয়ে নিঃসঙ্গ অথচ পরিপূর্ণ এক জীবনযাপন করছেন। মরুর বুকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন মানসিক প্রশান্তি ও আত্মতৃপ্তি।
সৌদি টেলিভিশন এমবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুকিয়া জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তাঁদের সংসারে সন্তান না থাকলেও স্বামীর সঙ্গে কাটানো দিনের স্মৃতিই তাঁর জীবনের মূল অবলম্বন। সেই স্মৃতিচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে উটগুলো, যাদের তিনি সন্তানসম ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন।
রুকিয়া বলেন, “এই উটগুলোই এখন আমার পরিবার। তারা আমার কণ্ঠ চিনে নেয়, আমার দিকে ছুটে আসে। একেকটা যেন আমার সন্তান।” নিজের হাতে উটগুলোর যত্ন নেওয়া, তাদের সঙ্গে সময় কাটানোই এখন তাঁর দিনযাপনের প্রধান অংশ।
আরও পড়ুন
শহরবাসী যেখানে আরামদায়ক যন্ত্রনির্ভর জীবনকে প্রাধান্য দেন, রুকিয়া ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটেছেন। তাঁর জীবন অনেকটাই কষ্টের, প্রযুক্তিহীন। কিন্তু তাতেই রয়েছে তার সুখ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে দিন শুরু করে তিনি পিকআপ চালিয়ে মরুভূমিতে উট চরান এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই চলেন।
রুকিয়ার জীবনের সবকিছু নিখুঁত নয়। পানির ব্যবস্থা করতে তাঁকে নির্ভর করতে হয় এক দয়ালু প্রতিবেশীর ওপর, যিনি তাঁর পানির ট্যাংক ভর্তি করে দেন। এ কারণে তাঁর স্বপ্ন—নিজের একটি পানির ট্যাংক কেনা। পাশাপাশি তিনি আশা করেন, এমন একটি উট তার হবে, যেটি কিং আবদুল আজিজ উট উৎসবে বিক্রি করে তিনি ৫০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পেতে পারেন।
“মরুভূমির জীবন অর্ধেক আশাবাদ, অর্ধেক হতাশা,” বলে মন্তব্য করেন রুকিয়া। তবে জীবন যেভাবেই হোক, স্বামীর স্মৃতি এবং উটগুলো নিয়ে এই মরুপ্রান্তরেই তার শান্তি। শহরের বিলাসিতা নয়, তার ঘর এই মরুভূমি আর সন্তানসম উটগুলোই তার পরিবার।