ভারতের শীর্ষ আদালত বলিউডের চলচ্চিত্র ‘হামারে বারাহ’-এর মুক্তি স্থগিত করে বলেছে যে, শুধুমাত্র চলচ্চিত্রটির টিজার বা সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞাপনেই পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু রয়েছে, যা বিবাহিত মুসলিম মহিলাদের এবং তাদের ধর্মের জন্য আপত্তিকর। ১৫ জুন ছবিটি মুক্তি দেওয়ার অনুমতি সংক্রান্ত মুম্বাই হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জের শুনানির পর দেশটির শীর্ষ আদালত বৃহস্পতিবার এই স্থগিতাদেশ জারি করে।’হামারে বারাহ’-এর নির্মাতাদের আইনজীবী দাবি করেছিল যে, তারা হাইকোর্টের আদেশ মেনে এটির বিজ্ঞাপন থেকে সমস্ত আপত্তিকর দৃশ্য ছেঁটে ফেলেছে এবং আইনজীবীরা যখন বলেছিলেন যে, স্থগিতাদেশের ফলে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ক্ষতি হবে, তখন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জবাব দেয়, ‘যদি টিজারই এতটা আপত্তিকর হয়, তাহলে সম্পূর্ন সিনেমার কী অবস্থা? প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন কারণ আপনারা নিজেরাই টিজার থেকে দৃশ্যগুলি মুছে ফেলেছেন।’ভারতীয় টিকেট প্ল্যাটফর্ম বুকমাইশো-এ ফিল্মটির সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘হামারে বারাহ মঞ্জুর আলী খান সানজারির গল্প বলে, যিনি সন্তান প্রসবের সময় তার প্রথম স্ত্রীকে হারানো সত্ত্বেও, তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে একাধিক সন্তানের জন্ম দিতে থাকেন, এখন তার স্ত্রী ষষ্ঠটির সাথে গর্ভবতী। যখন ডাক্তাররা সতর্ক করে দেন যে গর্ভাবস্থা তার জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ, খান গর্ভপাত প্রত্যাখ্যান করেন। সৎ মাকে বাঁচাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মেয়ে আলফিয়া তার বাবাকে গর্ভপাতের দাবিতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। ছবিটি আলফিয়া তার বাবা এবং আদালতকে রাজি করাতে এবং তাদের সমাজে পিতৃতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে কিনা, তা অনুসন্ধান করে।’এই চলচ্চিত্রটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ সেই সাম্প্রদায়িক বক্তৃতাকে প্রতিধ্বনিত করে, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তার ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বৃহত্তর হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা অভিযোগ করেছেন যে, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের অনেক বেশি সন্তান রয়েছে এবং তাই দেশের সম্পদ ও কল্যাণ সুবিধার একটি বড় অংশ তারা দখল করে নিচ্ছে।এদিকে, ভারতের ২০১৯-২১ সালের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে দেখায় যে, ১৯৯২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে একজন ভরতীয় মহিলার তার জীবদ্দশায় গড়ে সন্তান উৎপাদনের হার মুসলমানদের ক্ষেত্রে ৪.৪১ থেকে ২.৩৬ শতাংশে এবং হিন্দুদের ক্ষেত্রে ৩.৩ থেকে ১.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১১ সালে প্রকাশিত ভারতের সর্বশেষ আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা ১৯৫১ সালে ৩ কোটি ৫৪ লাখ থেকে ২০১১ সালে ১৭ কোটি ২০ লাখে উন্নীত হয়েছে, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ৩০কোটি ৩০ লাখ থেকে ৯৬ কোটি ৬০ লাখে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু, এপ্রিলে একটি নির্বাচনী প্রচারের ভাষণে মোদি মিথ্যা দাবি করেছিলেন যে, কংগ্রেস দলের নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে জাতির সম্পদের উপর প্রথম অধিকার ছিল মুসলমানদের।বিরোধী দলকে ভোট দেওয়ার বিরুদ্ধে বেশিরভাগ হিন্দু জনতাকে সতর্ক করে মোদি বলেছিলেন, ‘এর মানে তারা এই সম্পদ বিতরণ করবে তাদের কাছে যাদের বেশি সন্তান আছে, অনুপ্রবেশকারীদের কাছে। আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থ অনুপ্রবেশকারীদের দেওয়া উচিত?’হামারে বারাহ-এর বিরুদ্ধে বোম্বে উচ্চ আদালতে দায়ের করা আজির প্রেক্ষিতে এটি বলেছে যে, যে ছবিটি বিবাহিত মুসলিম মহিলাদের এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি অবমাননাকর এবং ট্রেলারটি কুরআনের একটি আয়াতকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করেছে। উচ্চ আদালত আরও বলেছে যে, চলচ্চিত্রটির মুক্তি দেশটির সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদ, যা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখ-তার স্বার্থে যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ আরোপের অনুমতি দেয়, এবং সেইসাথে অনুচ্ছেদ ২৫, যা প্রতিটি নাগরিকের বিবেকের স্বাধীনতার এবং স্বাধীন পেশা, ধর্মচর্চার প্রসারের নিশ্চয়তা দেয়, লঙ্ঘন করবে।ভারতের শীর্স আদালত উচ্চ আদালতকে মামলার যোগ্যতার উপর সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে এবং পর্যালোচনা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে আবেদনকারীকে আপত্তি জানানোর স্বাধীনতা দিয়েছে। ইতিমধ্যে, কর্নাটক রাজ্যের সরকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কায় চলচ্চিত্রচিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন