ইসলামে মানুষের সম্মান ও মর্যাদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—মৃত্যুর পরও সে মর্যাদার ব্যত্যয় হয় না। ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, মৃত মুসলমানকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, জানাজার নামাজ আদায় করে দাফনের ব্যবস্থা করা জীবিত মুসলমানদের ওপর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যা ফরজে কিফায়া হিসেবে বিবেচিত।
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে, সে এক কিরাত সওয়াব লাভ করে; আর দাফন পর্যন্ত অংশ নিলে সে দুই কিরাত সওয়াব লাভ করে।” নবীজি (সা.) ব্যাখ্যা করেছেন, দুই কিরাতের প্রতিটি ওহুদ পাহাড়ের সমান নেকির তুল্য। (ইবনে কাছির)
তবে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী কারও মরদেহ সম্পূর্ণ না পাওয়া গেলে, জানাজার বিধান কী হবে—এ নিয়ে ইসলামী শরিয়তের বিভিন্ন মত রয়েছে। হানাফি মতানুসারে, যদি মৃতদেহের মাথাসহ অর্ধেক বা মাথা ছাড়া অর্ধেকের বেশি অংশ পাওয়া যায়, তবে তা পূর্ণ মরদেহ হিসেবে ধরা হবে এবং গোসল, কাফন ও জানাজার সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে। কিন্তু শুধুমাত্র মাথা, হাত বা পায়ের মতো অল্প অংশ পাওয়া গেলে জানাজা নয়, বরং সেসব অংশ পবিত্র কাপড়ে মুড়িয়ে দাফন করতে হয়।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের মতে, মৃতের যেকোনো নিশ্চিত অংশ পাওয়া গেলে তাও গোসল ও জানাজার আওতায় আসে। তবে যদি নিশ্চিতভাবে মৃত্যুর প্রমাণ না থাকে এবং সেই অংশ জীবিত অবস্থায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে—এমন সন্দেহ থাকে, তাহলে জানাজা আদায় করা যাবে না। (নববি, আল-মাজমু)
জানাজার নামাজ আদায়ের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে নিয়ত করে চার তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ আদায় করতে হয়। প্রতিটি তাকবিরের পর নির্দিষ্ট দোয়া ও দরুদ পাঠ করা হয় এবং শেষ তাকবিরের পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।
এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি অধিকার রয়েছে, যার একটি হলো—মৃত্যুর পর তার জানাজায় শরিক হওয়া।” (মুসলিম: ২১৬২) এ থেকেই প্রতীয়মান হয়, জানাজার নামাজ শুধু ইবাদত নয়, বরং এটি একজন মৃত মুসলমানের প্রতি জীবিত মুসলমানদের সম্মান প্রদর্শনের অংশ।