জুলুমকারীকে দমন করাও ঈমানের দাবি

Suppressing the oppressor is also a requirement of faith.

ইসলাম শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম, যা মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলাম কেবল অন্যায় করতে নিষেধ করেনি, বরং জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, সীমা লঙ্ঘন কিংবা নিরীহের ওপর অত্যাচার চালানো—এসবই ইসলামে জুলুম হিসেবে বিবেচিত। কোরআন ও হাদিসে বারবার বলা হয়েছে, জুলুম হারাম এবং জালিমের প্রতি সহানুভূতি দেখানোও গর্হিত।

ইসলাম অনুযায়ী, জুলুম দুই প্রকার—নিজের ওপর জুলুম যেমন আল্লাহর অবাধ্যতা, এবং অন্যের ওপর জুলুম যেমন কারো অধিকার হরণ বা নিপীড়ন করা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকিয়ো না, তাহলে আগুন তোমাদের ছুঁয়ে ফেলবে।’ (হুদ ১১:১১৩)। অন্য এক আয়াতে আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।’ (আলে ইমরান ৩:৫৭)। এসব আয়াতে বোঝানো হয়েছে, জালিমদের প্রতি নীরব সমর্থনও ঈমানের পরিপন্থী।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো মন্দ কাজ দেখে, সে যেন তা হাতে প্রতিরোধ করে; না পারলে মুখে বলুক; তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করুক—এটাই হলো ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯)। এই হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করা ঈমানের দুর্বলতা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে এসেছে, ‘তোমার ভাই জালিম হোক বা মজলুম—তাকে সাহায্য করো।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলে রাসুল (সা.) ব্যাখ্যা করেন, ‘জালিম হলে তাকে তার জুলুম থেকে বিরত রাখাই হলো সাহায্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৪৪)। অর্থাৎ জালিমকে তার অন্যায় থেকে ফিরিয়ে আনা-ই হলো তার প্রতি প্রকৃত সহানুভূতি।

ইসলামের ইতিহাসে অনেক সাহসী ব্যক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের মতো এক চরম জালিমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আবার কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়কারী ইয়াজিদের বিরুদ্ধে প্রাণ দিয়ে প্রতিবাদের ইতিহাস গড়েছেন। এসব দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে, জালিমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ঈমানের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ।

আজকের সমাজেও আমাদের উচিত সচেতনতা সৃষ্টি, আইনি প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সত্য ও ইনসাফের পক্ষে থাকা এবং নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ, জালিমকে প্রতিহত করা কেবল সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একজন প্রকৃত মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

– মুহতামিম, জহিরুল উলুম মহিলা মাদরাসা, গাজীপুর।

আরও দেখুন:

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize