সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের আগেই তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দেশ ত্যাগে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে এক প্রবাসী আত্মীয়ের বরাতে জানা গেছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওই সদস্য জানিয়েছেন, ৩ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা পারিবারিক আলোচনায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে নেই, এবং সুরক্ষার স্বার্থে সবাইকে দ্রুত দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
জানা গেছে, ৪ আগস্ট কারফিউ চলাকালে মোবাইল ফোনে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়। বার্তাটিতে লেখা ছিল, “No one stay here”—যার অর্থ নির্দ্বিধায় বোঝা যায়, এটি ছিল চূড়ান্ত দেশত্যাগের নির্দেশনা। এই বার্তার পর বঙ্গবন্ধু পরিবারের একাধিক সদস্য দ্রুত দেশ ছাড়েন। এদের কেউ কেউ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
ওই প্রবাসী সূত্রটি আরও জানায়, শেখ হাসিনা শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দেরই দেশত্যাগে নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা সাধারণ কর্মীদের উদ্দেশে এমন কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে বিদেশে পৌঁছে যাওয়ার পর, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারত চলে যান। পরে শেখ রেহানা লন্ডনে চলে যান বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
এদিকে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এখন কারাবন্দি রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা চলছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একমাত্র সেরনিয়াবাত মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। তিনি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর পুত্র এবং শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাইয়ের সন্তান।
শেখ হাসিনার সরকারের শেষ সময়ে নেওয়া এই ‘গোপন প্রস্তুতি’ এখন রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এটিকে ‘অগ্রিম আত্মরক্ষামূলক কৌশল’ হিসেবে দেখছেন, যা তার সরকারের পতনের সম্ভাব্য পূর্বাভাস দিচ্ছিল।