বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল করেছে সরকার। সম্প্রতি জারি করা একটি অধ্যাদেশে তাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
নতুন অধ্যাদেশে শুধু প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দই নয়, আরও চার শ্রেণির ব্যক্তিকেও ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন: বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করা পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের অধীনে কাজ করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কলাকুশলী ও সাংবাদিকরা এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
এর আগে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন ২০২২ অনুযায়ী এ সকল শ্রেণির ব্যক্তিরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। তবে নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ায় এখন তাদের সেই স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেছে, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন
জানা যায়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে প্রণীত খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়। ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অনুমোদনের পর সংশোধন করে এটি চূড়ান্ত করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে অধ্যাদেশটি জারি হয়। এতে জামুকার প্রস্তাবিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’র সংজ্ঞায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, কেবলমাত্র ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও মুজিবনগর সরকার স্বীকৃত বাহিনীর সদস্যরাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন। এছাড়া নির্যাতিত নারী (বীরাঙ্গনা) ও ফিল্ড হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসা কর্মীরাও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
অন্যদিকে, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধই মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে।