২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি’ ও ‘ভোট চুরির’ নির্বাচন আখ্যা দিয়ে টাঙ্গাইলে দায়ের করা আলোচিত মামলাটি দায়েরের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বাদী কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ মোট ১৯৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির অলোয়া ইউনিয়ন সভাপতি কামরুল হাসান গত বুধবার (২১ মে) মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন এবং আদালত তা গ্রহণ করে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে।
মামলায় স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিককে আসামি করায় জেলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সংবাদকর্মী সমাজসহ বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর প্রেক্ষিতে বাদী মঙ্গলবার (২০ মে) অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অনাপত্তিপত্র দাখিল করেন এবং পরদিন সম্পূর্ণ মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। আদালতের পরিদর্শক লুৎফর রহমান জানান, বিচারক বাদী ও আইনজীবীর বক্তব্য শুনে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন, ফলে সেটি আর কার্যকর থাকছে না।
মামলার পেছনে রাজনৈতিক সমঝোতা ও গোপন বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা ও ভূঞাপুরের কয়েকটি স্থানে একাধিক বৈঠকে মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এসব বৈঠকে বাদী কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশেই মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন
এদিকে, জেলা বিএনপির নেতারা জানান, মামলার বিষয়টি তাদের অজানা ছিল এবং দায়ের ও প্রত্যাহারের বিষয়ে দলের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, পুরো প্রক্রিয়ার পেছনের সত্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং হাইকমান্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের প্রভাব ও নির্দেশে একটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তানভীর হাসান ছোট মনির ভোট চুরি করে জয়ী হন। এতে দেশের গণতন্ত্র, জনগণ ও সংবিধানের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন বাদী। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, যা এখন স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।