বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত, উদ্বেগ বাড়ছে
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেখানে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের কথা, সেখানে বাংলাদেশ উল্টো সংকোচনের মুখে পড়েছে। গত দুই বছরে অন্তত ১০টি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে ২৫টি প্রধান গন্তব্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বর্তমানে খোলা আছে মাত্র ১৬টি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার এই প্রবণতা চলমান থাকলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই অবস্থায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলের কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করার ওপর জোর দিচ্ছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ ও চ্যালেঞ্জ
শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক জটিল কারণ। যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, কাজের অনুমতি ছাড়াই লোক পাঠানো, সুনির্দিষ্ট তথ্যভান্ডার না থাকা এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনিয়ম এসবের অন্যতম। দক্ষতা, ভাষা জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যের ঘাটতি বিদেশি নিয়োগদাতাদের আস্থা হারিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের তদারকির অভাব, জবাবদিহিতার দুর্বলতা এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিস্ক্রিয়তাও সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে।
প্রধান শ্রমবাজারগুলোর বর্তমান চিত্র
ইতালি, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপসহ গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারগুলো আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ইতালি বাংলাদেশি কর্মীদের জাল নথির অভিযোগে ভিসা বন্ধ করেছে, যদিও চলতি বছরের মে মাসে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। মালয়েশিয়া ২০২৩ সালের মে মাসে শ্রমবাজার বন্ধ করলেও, বিএমইটির ছাড়পত্রপ্রাপ্ত প্রায় ১৭ হাজার কর্মী এখনও যেতে পারেননি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা পুরোপুরি বন্ধ না হলেও নতুন নিয়োগ প্রায় স্থবির। মালদ্বীপে সংক্ষিপ্ত সময় চালু থাকার পর পুনরায় ভিসা বন্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
ব্যর্থতা ও প্রস্তাবিত উদ্যোগ
২০১৮ সালে গঠিত শ্রমবাজার গবেষণা সেল কার্যত অচল রয়েছে, যা বিদেশি বাজার বিশ্লেষণ ও কূটনৈতিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ। বিশ্লেষকদের মতে, বাইলেটারাল চুক্তি ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থার অভাবের কারণে সরকার যেমন শ্রমবাজার ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি নতুন বাজারও তৈরি করতে পারছে না। দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবাসী সুরক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয়।
সমাধানে করণীয় ও ভবিষ্যৎ ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন, সরকারের উচিত বিদেশি দূতাবাসগুলোতে লেবার অ্যাটাচে নিয়োগ, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা এবং অভিবাসন কূটনীতিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো। নারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করাও জরুরি। প্রবাসী কল্যাণে শুধুমাত্র সরকারি সদিচ্ছাই যথেষ্ট নয়, বরং বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের সমন্বিত উদ্যোগেই গড়ে উঠতে পারে টেকসই ও বিস্তৃত শ্রমবাজার।