যুদ্ধের উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) ওপর চালানো একটি সাইবার হামলায় প্রায় ৯ কোটি ডলার সমমূল্যের ডিজিটাল মুদ্রা চুরি হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, গত মাসে এ হামলা চালায় ইসরায়েল-সমর্থিত হ্যাকার গোষ্ঠী। এই আর্থিক ক্ষতি ইরানের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হ্যাকিংয়ের দায়িত্বে ছিল ‘প্রিডেটরি স্প্যারো’ নামের একটি হ্যাকার দল, যাদের ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সাইবার হামলার সময় তারা আইআরজিসি-এর সঙ্গে যুক্ত একাধিক ক্রিপটো ওয়ালেটের তথ্য চুরি ও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। বিশেষভাবে ‘ব্যাংক সেপাহ’-কে লক্ষ্যবস্তু করে পরিচালিত এই হামলায় সামরিক বাহিনীর বেতন প্রদান ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে।
ইরানের সবচেয়ে বড় ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ ‘নোবিটেক্স’-এ প্রবেশ করে হ্যাকাররা আইআরজিসি-এর ৯ কোটি ডলারের স্টেবলকয়েন সরিয়ে নিয়ে এমন এক ঠিকানায় পাঠায়, যেখান থেকে তা পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এর ফলে এই সম্পদ কার্যত চিরতরে হারিয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ‘ব্যাংক মেল্লি’ নগদ অর্থ সরবরাহে ব্যর্থ হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেও বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
আরও পড়ুন
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ে। রিয়ালের মান এক ধাক্কায় প্রায় ১২ শতাংশ কমে যায় এবং তেহরান স্টক এক্সচেঞ্জ সাময়িকভাবে লেনদেন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর বিশ্লেষণে বলা হয়, এই সাইবার সফলতা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো সম্মেলনে মন্তব্য করেন, “ইরান সমৃদ্ধ হতে পারে, তবে পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে সাইবার অভিযানে সরাসরি জড়িত হওয়ার নীতিতে এগোচ্ছে। এই ঘটনা শুধু ইরানের জন্য নয়, বিশ্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যও একটি বড় সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে।