অনলাইন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দুবাইয়ে বসবাসরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক হারিয়েছেন ৪২ হাজার দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সহজ আয়ে লাভ’ দেখিয়ে তাকে একটি ভুয়া ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করা হয়। শুরুতে সামান্য লাভ দেখিয়ে তার বিশ্বাস অর্জন করা হলেও পরবর্তী সময়ে ‘ট্রান্সফার কোড ত্রুটি’র অজুহাতে আরও অর্থ দাবি করা হয়। চাহিদামাফিক অর্থ পরিশোধের পর প্রতারকচক্র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তখন তিনি নিশ্চিত হন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
গালফ নিউজ-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই ঘটনাটি দুবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চলমান সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন “Don’t Fall for It”-এর আওতায় প্রকাশ করা হয়েছে। এ ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য—প্রবাসী ও নাগরিকদের অনলাইন আর্থিক প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করা। মন্ত্রণালয় জানায়, এসব ভুয়া ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম মূলত বিদেশ থেকে পরিচালিত হয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপে প্রাপ্ত একটি বার্তায় প্রতিদিন ১০০ থেকে ৩২৫ দিরহাম আয়ের প্রলোভন দেওয়া হয়। প্রাথমিক লাভ দেখে তিনি আস্থা পান এবং পর্যায়ক্রমে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেন। সর্বশেষ ৪২ হাজার দিরহাম জমা দেওয়ার পর ‘কারিগরি সমস্যা’র অজুহাতে আরও ৪২ হাজার দিরহাম দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা পাঠানোর পর প্রতারকদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন
দুবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক কর্নেল ড. ইব্রাহিম আল মিয়াহী বলেন, ফেক এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা এবং কম মূল্যে পণ্য বা সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি—এই তিনটি এখন প্রতারণার প্রধান হাতিয়ার। তিনি আরও বলেন, “অনেকেই সন্দেহ হওয়া সত্ত্বেও লেনদেন বন্ধ করেন না, যার খেসারত দিতে হয় পরে।”
মন্ত্রণালয় পরামর্শ দিয়েছে, যেকোনো অনলাইন ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগের আগে Securities and Commodities Authority-এর ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও বৈধতা যাচাই করা উচিত। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এখন প্রতারকচক্রগুলো নিজেদেরকে এতটাই পেশাদারভাবে উপস্থাপন করে যে নতুন বিনিয়োগকারীরা সহজে বিভ্রান্ত হন। এজন্য বিনিয়োগের আগে যাচাই-বাছাই ও পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রতারিত হলেও অনেক ভুক্তভোগী লজ্জা বা ভয়ের কারণে অভিযোগ জানান না, ফলে প্রতারকরা আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে। অথচ দ্রুত রিপোর্ট করলে অনেক সময় প্রতারণা প্রতিরোধ সম্ভব হয়। প্রতিটি এমিরেটেই সাইবার অপরাধ দমন ইউনিট কাজ করছে, যারা আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত পরিচালনা করছে।