মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ১২ দিনের সশস্ত্র সংঘাত অবশেষে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়েছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতি পুরো বিশ্বে দুশ্চিন্তা তৈরি করলেও শেষ মুহূর্তের সমঝোতা স্বস্তির আবহ ফিরিয়ে এনেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ইসরায়েল—তিন পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংঘাতে ‘বিজয়ের দাবি’ করছে।
সংঘাত চলাকালে ইরান তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে এবং ধারাবাহিক হামলায় ইসরায়েলি বাহিনীকে বিপাকে ফেলে দেয়। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলও ইরানের আকাশে প্রভাব বিস্তার করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ চালিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
আরও পড়ুন
পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় নেয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে, যেখানে তিনি জানান, তেহরান ও তেল আবিব যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এর কয়েক মিনিট আগেই ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি শহরে আঘাত হানে, যা অনেকের মতে ইরানের শেষ মুহূর্তের সাহসিকতার ইঙ্গিত।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, তাদের হামলায় ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নিজেদের কোনো সেনা ক্ষয় না করেই তারা কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে। ট্রাম্প নিজেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার ‘দূত’ হিসেবে তুলে ধরছেন এবং ইতোমধ্যে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল মনে করছে, তারা শুধু ইরানকে সামরিকভাবে দমনই করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংঘাতে যুক্ত করে কূটনৈতিকভাবেও সাফল্য পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব নির্বাচনের আগে বড় সুবিধা দেবে।
ইরানও আত্মবিশ্বাসী। তারা বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আত্মসমর্পণ না করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা তাদের জন্য বড় অর্জন। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির নির্দেশে পাল্টা জবাব দিয়ে তারা একদিকে মুখ রক্ষা করেছে, অন্যদিকে সংঘাত নিয়ন্ত্রণেও থেকেছে।
এই যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও তিনটি পক্ষই নিজ জনগণের সামনে নিজেদের বিজয়ী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তথ্যযুদ্ধ, মনস্তাত্ত্বিক লড়াই এবং কূটনৈতিক ব্যাখ্যার এই পর্বে আসল বিজয়ী কে—তা সময়ই বলে দেবে।