ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় সেমনান প্রদেশে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কারণ, কম্পনটি আঘাত হেনেছে ইরানের অন্যতম কৌশলগত ও গোপন সামরিক স্থাপনা—সেমনান স্পেস সেন্টার ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কমপ্লেক্স এলাকায়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সেমনান শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার, যা বিশেষজ্ঞদের মতে অগভীর কম্পনের মধ্যে পড়ে।
এ ধরনের ভূকম্পন সাধারণত প্রাকৃতিক হলেও, ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে এর কিছু মিল থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, ভূমিকম্পের সময় ও অবস্থানকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে—এটি প্রকৃত ভূমিকম্প, না কি ইচ্ছাকৃত বিস্ফোরণের ফল? এই সন্দেহ আরও জোরালো হয় যখন দেখা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যেই, যেখানে উভয়পক্ষ সামরিক হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িত।
সেমনান অঞ্চলটি ইরানের অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রযুক্তিকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই ইরান তাদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও পরিচালনা করে। বর্তমানে দেশটি হাইপারসনিক এবং বহু ওয়ারহেডযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের কাজ চালাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ভূমিকম্প হতে পারে একটি ‘ডিকয়’—অর্থাৎ বড় কোনো সামরিক পরীক্ষার আড়াল।
আরও পড়ুন
ভূমিকম্পের মাত্র একদিন আগেই ইরান ও ইসরায়েল জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে পারস্পরিক হুমকি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এর প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল দাবি করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি গোপনে সামরিক উদ্দেশ্যে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তাই সেমনানে ভূমিকম্পটি নিছক প্রাকৃতিক ঘটনা নাকি এর পেছনে সামরিক উদ্দেশ্য আছে—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে।
যদিও এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবুও ভূমিকম্পের অবস্থান, সময় এবং ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে এটি সাধারণ একটি কম্পন হিসেবে নেওয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাটিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যদি এটি কোনো গোপন অস্ত্র পরীক্ষা বা সামরিক কৌশলের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।