গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ ও লাগাতার সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই বর্বরতার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা সেখানে নতুন অবৈধ বসতি নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েল সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো আগেই বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ যৌথভাবে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। তারা এটিকে ‘জুডিয়া ও সামারিয়ায় নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেন।
এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। রয়টার্সের এক গোপন প্রতিবেদনে প্রকাশিত চিঠিতে জানা যায়, ইউরোপের ৯টি দেশ—বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন—ইউরোপীয় কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, যেন ফিলিস্তিনি অধিকৃত ভূখণ্ডে অবৈধ বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে ২০২৩ সালে দুই পক্ষের মধ্যে পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরো। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চিঠিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) একটি মতামতের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের দখল অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই পরিস্থিতি বজায় রাখতে সহায়তা করা বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত এখনই এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে তাদের নীতিগুলো কোনোভাবে অবৈধ বসতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সমর্থন না করে। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাণিজ্যনীতি নিশ্চিত করাই ইউরোপের দায়িত্ব। বাণিজ্যকে মানবাধিকার থেকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়।”
আগামী ২৩ জুন ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। গাজায় চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল কি ইইউ-চুক্তির মানবাধিকার ধারা মেনে চলছে, সেটি খতিয়ে দেখেই ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।