মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা অঞ্চলে। ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের সামরিক অভিযান ইরানের পরমাণু কার্যক্রম থামানোর প্রয়োজনে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন, দখল ও সহিংসতার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে আবারও ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘাতকালীন গুরুতর সহিংসতা সংঘটনের দায়ে ইসরায়েলের নাম যুক্ত করা হয়েছে এ তালিকায়। পরপর দ্বিতীয়বারের মতো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া দেশটি এবার শিশুদের ওপর বর্বরতার মাত্রায় নজিরবিহীন অবস্থানে রয়েছে।
জাতিসংঘের ‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ১৮ বছরের নিচে শিশুদের বিরুদ্ধে ৪১,৩৭০টি গুরুতর সহিংসতা জাতিসংঘ যাচাই করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা ২,৯৫৯ শিশুর ওপর মোট ৮,৫৫৪টি সহিংসতা সংঘটিত হয়, যার মধ্যে ২,৯৪৪ জন ফিলিস্তিনি এবং মাত্র ১৫ জন ইসরায়েলি শিশু।
আরও পড়ুন
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, গাজা ও অধিকৃত এলাকায় শিশুদের ওপর সহিংসতার মাত্রা তাকে স্তম্ভিত করেছে। জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা, শিশুদের রক্ষা এবং বেসামরিক স্থানে হামলা বন্ধের আহ্বান জানান। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু গাজায় ২০২৪ সালে ১,২৫৯ শিশু নিহত এবং ৯৪১ জন আহত হয়েছে। আরও ৪,৪৭০ শিশুর মৃত্যুর তথ্য যাচাই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৯৭ শিশু নিহত এবং ৩,৬৮৮টি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে হামাসের কাসাম ব্রিগেড ও ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডকেও জাতিসংঘ দ্বিতীয়বারের মতো কালো তালিকায় যুক্ত করেছে। এ ছাড়া শিশুদের ওপর সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কঙ্গো, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, হাইতি, এবং সহিংসতা বৃদ্ধির দিক দিয়ে লেবানন, মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া ও ইউক্রেন।