মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় বইছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা চীন ও রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে লাভজনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ড. আলম সালেহ এক সাক্ষাৎকারে আল-জাজিরাকে এমন মন্তব্য করেছেন।
ড. সালেহ বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে চীন ও রাশিয়া ‘অদৃশ্য হাসি’ হাসবে। কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে আবদ্ধ হয়ে পড়বে, যা তার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান কোনো তালেবান বা হুথিদের মতো নয়—তারা সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সংগঠিত এবং শক্তিশালী।
আরও পড়ুন
বিশ্লেষকের মতে, এই ধরনের যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ ইউক্রেন ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে সরে যাবে। এতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা পাবে এবং চীন তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাপে পড়বে, যা প্রতিযোগী দেশ হিসেবে চীন ও রাশিয়ার জন্য লাভজনক।
তবে চীন ও রাশিয়া প্রকাশ্যে ইরানকে সমর্থন দেবে না বলেও মত দিয়েছেন ড. সালেহ। কারণ, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং রাশিয়া আগেই নানা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত। প্রকাশ্যে ইরানের পক্ষে অবস্থান নিলে এ দুই দেশকেই পশ্চিমাদের নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। তাই তারা পর্দার আড়ালে নিজেদের স্বার্থেই কৌশলগত সুবিধা নেওয়ার পথ বেছে নেবে।
বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করছেন, হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বৈশ্বিক জ্বালানিবাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হবে। এতে চীনের শিল্প ও রপ্তানি খাতে খরচ বেড়ে যাবে, অন্যদিকে রাশিয়া তেলের দাম বাড়ায় তাৎক্ষণিকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক মন্দার কারণে তাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে চীন-রাশিয়া প্রকাশ্যে শান্তির আহ্বান জানালেও, পর্দার আড়ালে এই সংঘাতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের প্রস্তুতি নিতে পারে।