মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কে আগে চূর্ণ হবে—তা এখন নির্ধারণ করাই কঠিন হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক বার্তা ও বিবৃতির মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। কানাডায় জি-৭ সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পথে ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি বলেন, “ইরানের আকাশ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে” এবং “আয়াতুল্লাহ খামেনির অবস্থান আমাদের জানা”— এমন মন্তব্য করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করেন তিনি।
সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে ইরান প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে এএফপি জানায়, ‘ফাত্তাহ’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ইসরাইলি ভূখণ্ডে আঘাত হানে। আইআরজিসি দাবি করে, ইসরায়েলের আকাশে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলও আলবোর্জ প্রদেশে বিমান হামলা চালায় এবং একাধিক সামরিক ও পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, তারা ইতোমধ্যে ১১০০-এর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং অন্তত ৫০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ৪০টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, তেহরান ও কারাজের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। তবে এসব দাবির বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস জানায়, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে অন্তত ৫৮৫ জন নিহত ও ১,৩২৬ জন আহত হয়েছেন। যদিও ইরান সরকারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২২৪ এবং আহত ১,২৭৭ জন। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠায় তেহরানে হামলা চলাকালীন ইরানি একটি ড্রোন সিরিয়ার ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েল ধাপে ধাপে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তবে এই যুদ্ধ যে আর কেবল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপে আন্তর্জাতিক অঙ্গন আরও উত্তেজিত হয়ে উঠছে। তবে হোয়াইট হাউজে ইরানি মধ্যস্থতাকারীরা যাচ্ছেন— ট্রাম্পের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। ইরান জাতিসংঘে তাদের বিবৃতিতে ট্রাম্পকে ‘কাপুরুষ’ বলে অভিহিত করে জানায়, তারা কখনো জোর-জবরদস্তির ভিত্তিতে শান্তি মেনে নেবে না।