মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় সৌদি আরবগামী একটি বাংলাদেশি বিমান রক্ষা পেয়েছে বড় ধরনের বিপদ থেকে। শুক্রবার (স্থানীয় সময় ভোরে) পারস্য উপসাগরের আকাশে থাকা অবস্থায় বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট সরাসরি দেখেন ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ ছেঁড়ে পশ্চিমের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। তবে দ্রুততার সঙ্গে ফ্লাইট রুট পরিবর্তন করায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাত ২টা ১৫ মিনিটে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বাংলাদেশি বিমানটি। ফ্লাইটটির দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ইনাম তালুকদার এবং কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন রাফসান রিয়াদ। ভারত, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে যখন তারা বাহরাইনের আকাশে পৌঁছান, তখন স্থানীয় সময় প্রায় ভোর ৫টা।
আরও পড়ুন
সে সময় ৪০ হাজার ফুট উঁচুতে থাকা বিমান থেকে ক্যাপ্টেন ইনাম দেখতে পান ইরানের আকাশে হঠাৎ উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। প্রাথমিকভাবে সেটিকে সাধারণ কোনো সামরিক মহড়ার অংশ বলেই মনে করেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা লক্ষ্য করেন, একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে উঠে পশ্চিমমুখী হয়ে ছুটে চলেছে। ঘটনাটি ছিল ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের ওপর চালানো পাল্টা হামলার অংশ।
ঘটনার আকস্মিকতায় কো-পাইলট রাফসান রিয়াদও বিস্মিত হয়ে পড়েন। দুই পাইলট দ্রুততার সঙ্গে ফ্লাইটের রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। কেবল একটিই ভাবনা তাদের মাথায় ঘুরছিল— যদি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পথভ্রষ্ট হয়ে তাদের বিমানের দিকে ধেয়ে আসে, তবে কী হবে? তবু ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তারা বিমানটি নিরাপদে গন্তব্য রিয়াদে অবতরণ করান।
পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরে নামার পর মোবাইল চালু করতেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চোখে পড়ে হামলার খবর। ‘ইসরায়েলে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’— এমন শিরোনাম তাদের দেখিয়ে দেয় কতটা কাছ থেকে তারা ইতিহাসের একটি ভয়াবহ মুহূর্তকে প্রত্যক্ষ করেছেন। ক্যাপ্টেন ইনাম বলেন, “সেদিন আমি শুধু একজন পাইলট ছিলাম না, বরং ইতিহাসেরও একজন জীবন্ত সাক্ষী হয়ে উঠেছিলাম।”