সম্প্রতি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে তেলআবিবের কিছু অংশ এমনভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে যে, অনেকেই সেগুলোকে ফিলিস্তিনের গাজার সঙ্গে তুলনা করছেন। ইরান থেকেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে—এই সংঘাত কি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেবে? যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি এতে জড়াবে? কিংবা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের কিছু কৌশলগত ও প্রাকৃতিক সুবিধা রয়েছে, যা তাকে অজেয় করে তোলে। এমন অন্তত সাতটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে, যার কারণে ইরানকে পরাজিত করা খুব কঠিন। এর মধ্যে অন্যতম হলো হরমুজ প্রণালির নিয়ন্ত্রণ। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল পরিবহনের রুট এই ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত জলপথটি ইরানের দক্ষিণ সীমান্ত ঘেঁষে। এর আশপাশের সাতটি দ্বীপও ইরানের নিয়ন্ত্রণে। ইরান যদি এটি বন্ধ করে দেয়, তবে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ইরানকে দেয় অতুলনীয় নিরাপত্তা। ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত ইরান ইতিহাসে টিকে থাকা পুরনো রাষ্ট্রগুলোর একটি। পশ্চিম ও দক্ষিণে জাগরোস এবং উত্তরে আলবোর্জ পর্বতমালা ইরানকে দেয় প্রাকৃতিক দুর্গের সুরক্ষা। এ পাহাড় পেরিয়ে কেউ এগোতে পারলেও সামনে পড়ে উত্তপ্ত লুত মরুভূমি—যা সামরিক আগ্রাসনের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল।
আরও পড়ুন
ইরানের সামরিক শক্তিও অবহেলা করার মতো নয়। দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত, যা শুধু ইসরায়েল নয়, ইউরোপের অনেক অংশও আঘাত হানার আওতায় আনতে পারে। পাশাপাশি, সাশ্রয়ী ও কার্যকর ড্রোন প্রযুক্তিতে ইরান বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ইরানি ড্রোন ব্যবহার করে অনেক সফলতা পেয়েছে।
তেলের বিশাল মজুদ এবং আন্তর্জাতিক জোট গঠনের কৌশলও ইরানকে শক্তিশালী করে তুলেছে। বিশ্বের মোট তেল ও গ্যাস রিজার্ভের যথাক্রমে ১০ ও ১৫ শতাংশ মজুদ রয়েছে ইরানে। এর ফলে দেশটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে ইরান পশ্চিমা চাপে দৃঢ়ভাবে টিকে রয়েছে।
সবশেষে, সরাসরি যুদ্ধ ছাড়াও ‘ছায়া যুদ্ধের’ ক্ষমতা ইরানের একটি বড় শক্তি। হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহীসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে থাকা তাদের সমর্থিত গোষ্ঠী দিয়ে ইরান প্রতিপক্ষদের ওপর চাপ বজায় রাখে। এভাবেই পারস্য সভ্যতার ধারক দেশটি বারবার বৈরী শক্তির মোকাবিলা করে এখনো তার অবস্থান ধরে রেখেছে—ভবিষ্যতেও সে সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।