টানা পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে চিরবৈরী দুই দেশ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের এক নতুন ধাপ শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত রাতভর আকাশে হামলার দৃশ্য দেখে বহু মানুষ আশঙ্কা করছেন, এই উত্তেজনা এবার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে। নিরাপত্তাজনিত কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ তাদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে ডজনখানেক বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে হাজার হাজার যাত্রী আটকে পড়েছেন।
ইরানের কোম প্রদেশে অবস্থান করা আইমাল হোসেইন জানান, ইসরায়েলি হামলার দিন তার হোটেলের সামনে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর থেকেই তিনি দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ইরানি আকাশসীমা বন্ধ থাকায় আটকে রয়েছেন। তার মতো আরও অনেক বিদেশি নাগরিক এখন সেখানে আটকে আছেন। অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক জন কক্স বলেন, এই পরিস্থিতি শুধু নিরাপত্তাজনিত নয়, এতে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বিমান ও যাত্রীদের অবস্থান এলোমেলো হয়ে গেছে।
এল আল এয়ারলাইন্সের যাত্রী জভিকা বার্গ জানান, নিউইয়র্ক থেকে ইসরায়েল যাওয়ার সময় পাইলট আকস্মিকভাবে গন্তব্য পরিবর্তনের কথা জানান এবং সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়ায় ৫০ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি যাত্রী বিদেশে আটকে পড়েছেন, এবং ইসরায়েলি বিমানগুলো সাইপ্রাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
ইসরায়েলি নাগরিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর সতর্কবার্তা দিয়েছে, যাতে তারা জর্ডান ও মিশরের সীমান্ত দিয়ে না যায়, যদিও এই দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এদিকে ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তর করছে, তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়নি।
লেবানন ও জর্ডানের আকাশসীমা আংশিক খোলা থাকলেও ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিল হওয়ায় সেখানকার বিমানবন্দরগুলোতেও নেমেছে বিশৃঙ্খলা। সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানবন্দরগুলো সম্প্রতি সংস্কার করা হলেও এই সংকটে আবারও সমস্যায় পড়েছে। প্রতিবেশী ইরাক সম্পূর্ণভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইরাক ও তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে, যার আওতায় ইরাকি নাগরিকরা তুরস্ক হয়ে সড়কপথে দেশে ফিরতে পারবেন।