সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মাঝে এক অভাবনীয় পদক্ষেপ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে জর্ডান। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিজেদের আকাশসীমায় ভূপাতিত করে দেশটি। এমনকি কোনো কোনো প্রতিবেদনে ইরানে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ হয়েও ইসরায়েলকে এমন সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদানের ঘটনায় বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর আগ্রহ ও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জর্ডানের এই ভূমিকা আপাতদৃষ্টিতে বেশ আশ্চর্যজনক, কারণ দেশটির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, প্রায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। স্বয়ং জর্ডানের রানী রানিয়াও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের একজন কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তা সত্ত্বেও, জর্ডান সরকার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী একটি অবস্থান গ্রহণ করেছে। দেশটির বিমানবাহিনী সক্রিয়ভাবে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করে নিজেদের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখে, যা প্রকারান্তরে ইসরায়েলকেই রক্ষা করেছে।
এই পদক্ষেপের পেছনে জর্ডানের একাধিক কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ রয়েছে। জর্ডান যুক্তরাষ্ট্রের একটি “প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র” এবং ২০২১ সালে ওয়াশিংটনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও এই চুক্তি মার্কিন বাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য জর্ডানের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ দেয়, তবে এটি জর্ডানকে কোনো মার্কিন সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণে বাধ্য করে না। একইভাবে, ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি থাকলেও সেখানে পারস্পরিক সামরিক সমর্থনের কোনো ধারা উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন
মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জর্ডানের এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণটি সম্পূর্ণরূপে আত্মরক্ষামূলক। আম্মানের আনুষ্ঠানিক যুক্তি হলো, এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে সমর্থনের জন্য নয়, বরং নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডকে রক্ষা করার জন্য নেওয়া হয়েছে। তাদের আশঙ্কা ছিল, ইরানের ছোড়া বিপুলসংখ্যক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু অংশ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বা কারিগরি ত্রুটির কারণে জর্ডানের জনবহুল এলাকায় আঘাত হানতে পারত। তাই নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা নিজেদের আকাশসীমায় প্রবেশকারী যেকোনো সন্দেহভাজন বস্তুকে ভূপাতিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কারণ যাই হোক না কেন, জর্ডানের এই কৌশলগত ভূমিকা ইরানের আক্রমণ প্রতিরোধে ইসরায়েলের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অভাবনীয়ভাবে সহায়তা করেছে। জর্ডানের অংশগ্রহণের ফলে ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে আসা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জন্য ইসরায়েল публично জর্ডানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, যা এই দুই দেশের মধ্যকার জটিল সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে নতুন করে সামনে এনেছে।