মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস :
প্রবাসের ঈদ মানেই ভিন্ন এক অনুভূতি। ঈদের খুশি আসে, কিন্তু প্রবাসে যেন সে খুশিও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হাজার মাইল দূরে বসবাস করেও দেশে থাকা প্রিয়জনদের স্মৃতি যেন ঈদের সকালে আরও বেশি করে তাড়া করে ফেরে প্রবাসীদের। বহু প্রবাসীর ঈদের দিনেও ছুটির সুযোগ পান না। কর্মক্ষেত্রেই কাটে ঈদের সকাল, নামাজ হয়তো আদায়ই করা হয় না জামাতে। চারপাশে থাকে না কোনো আপনজন, থাকে না কোলাকুলির উষ্ণতা, থাকে শুধু দায়িত্ব আর দূরত্ব। ভিডিও কলেই মায়ের চোখে পানি, সন্তানের মুখে হাসি খোঁজেন তারা। এ এক নিঃসঙ্গ ঈদ, ত্যাগ আর অপেক্ষার ঈদ।
গ্রিসের এথেন্সের ওমোনিয়া এলাকার এক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে ঈদের দিন দেখা গেল কয়েকজন প্রবাসী একসাথে বসে ভিডিও কলে পরিবারের সাথে কথা বলছেন। চোখে আনন্দের জল, মুখে হাসি আর হৃদয়ে ব্যথা—এই যেন প্রবাসের ঈদ।
আরও পড়ুন
আলাপচারিতায় গ্রিস প্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন: “এই নিয়ে দশটা ঈদ কাটালাম পরিবারের বাইরে। সকালে উঠে আব্বা-আম্মার জন্য দোয়া করি। নামাজ পড়ে চোখ ভিজে যায়। মনে হয়, কেন এতো দূরে আসলাম!”
জুবায়ের আহমেদ বলেন “কোন কোন বছর ঈদের দিনটাতেও কাজে থাকতে হয়। সবাই যখন জামাতে নামাজ পড়ে, আমরা তখন কাজে। ফোনে মা কান্না করে, বলে—তুই কী ঈদের নামাজ পড়লি? আমি চুপ করে থাকি। প্রবাসে ঈদের দিনটা মনে হয় আরও একা করে দেয় মানুষকে।”
গ্রিসের একটি দ্বীপে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন অলিউর রহমান। তিনি এবার রাজধানী এথেন্সে বাংলাদেশিদের সাথে প্রথম ঈদের নামাজ আদায় করেছে।
অলিউর বলেন: “গ্রিসে হাজারো মানুষের মাঝে থেকেও ঈদের দিন নিজেকে সবচেয়ে একা লাগে। আমি এমন এক জায়গায় থাকি সেখানে কেউ সকালে এসে জড়িয়ে ধরে বলে না ‘ঈদ মোবারক’।”
ঈদের জামাতে অনেক বাংলাদেশি নারীরাও অংশ নেন। নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ সময় পর্তুগাল প্রবাসী তন্নী আক্তার নামের এক নারীর সাথে কথা হয়। তিনি এক বছর আগে পারিবারিক ভিসায় পর্তুগালে এসেছেন। গ্রিসে আত্মীয়-স্বজন আছেন তাই তাদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে গ্রিসে আসেন।
তন্নী আক্তার বলেন: “নারী হয়ে প্রবাসে থাকা এমনিতেই কঠিন, ঈদের দিন আরও কষ্ট লাগে। মা ও বোন আমার ভিডিও কলে বললো ‘তুমি না থাকলে ঈদ ভালো লাগে না।’ তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।”
এইসব অনুভূতির ভিড়ে স্পষ্ট, ঈদ শুধু আনন্দ নয়, তা প্রবাসীদের জন্য এক ধরনের নীরব কান্নাও। তারা হয়তো চোখে জল রাখেন না, কিন্তু মনে বহন করেন হাজারো অনুভবের ভার।
উল্লেখ, ৬ জুন (শুক্রবার) প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের বোটানিতে সরকার অনুমোদিত মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের তত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন মসজিদে ৩ থেকে ৪ ধাপে জামাতে নামাজ আদায় করেছেন।
এথেন্স সরকারি জামে মসজিদ ও মাঠে বিভিন্ন দেশের নারী ও কিশোরী মুসলিম প্রবাসীরা একত্রিত হয়ে প্রাণবন্তভাবে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। সেখানে বড় পরিসরে মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের জন্য আলাদা আলাদাভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। ঘণ্টার ব্যবধানে পর পর কয়েকটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ কমিউনিটি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা জামাতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন এবং নামাজ শেষে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।