মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে ‘সান্ডা’ নামক একটি টিকটিকি সদৃশ প্রাণী। মরুভূমিতে এই প্রাণী ধরার দৃশ্য নিয়ে কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয় কৌতুক, গুজব ও জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলছেন “সান্ডা ধরলেই চাকরি পাকা”, কেউবা বলছেন “ভিসা রিনিউয়ের জন্য সান্ডা আবশ্যক”—এসব মন্তব্যে ভরে গেছে নেটদুনিয়া।
‘সান্ডা’, যার বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx hardwickii, মূলত একটি মরুভূমিবাসী সরীসৃপ। ভারত, পাকিস্তান ও আরব অঞ্চলের শুষ্ক ও পাথুরে এলাকায় এদের দেখা মেলে। মোটা, কাঁটাযুক্ত লেজবিশিষ্ট এই প্রাণীকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে বিশ্বাস রয়েছে, এর চর্বি থেকে তৈরি তেল নানা রোগের ওষুধ, বিশেষত যৌন দুর্বলতা ও বাতব্যথার জন্য। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখনো মেলেনি।
এই প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকের সান্ডা শিকারের ভিডিও ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একধরনের ব্যঙ্গ-সাংস্কৃতিক ঢেউ শুরু হয়। “সান্ডা ধরলেই প্রোমোশন”, “বোনাস পেতে হলে সান্ডা ধর” ইত্যাদি মন্তব্য ও মিম ঘুরে বেড়াতে থাকে হাজারো টাইমলাইনে। তবে এই ট্রেন্ড শুধু মজার বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, বিদেশি বন্যপ্রাণী আমদানি, বিক্রয় বা পোষা নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সম্প্রতি কিছু প্রবাসী সান্ডা দেশে আনার চেষ্টা করছেন, এমন খবর পাওয়ার পর শুল্ক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। একইসঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে প্রচারও চালানো হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রুমানা আফরোজ জানান, “সান্ডা তেল নিয়ে প্রচলিত অধিকাংশ দাবি ভিত্তিহীন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর কোনো স্বীকৃত ব্যবহার নেই বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”
এই এক সরীসৃপকে কেন্দ্র করে মজার ছলে যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে, তা আমাদের সামাজিক আচরণ, গুজবপ্রবণতা এবং বন্যপ্রাণী বিষয়ে সচেতনতার অভাবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।