ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড। টানা ১৮ মাসের আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধে দুর্ভিক্ষের চরম ঝুঁকিতে পড়েছে গাজার সাধারণ মানুষ। অবরোধের কারণে যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫৭ জন ফিলিস্তিনি ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক।
গাজার মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে আনাদোলু বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অবরোধের ফলে অন্তত ৫৭ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক অনাহারে মারা গেছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকায় খাদ্য, শিশুদের দুধ, পুষ্টিকর উপাদান এবং জরুরি ওষুধ প্রবেশ করতে না পারায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। শনিবার গাজা শহরের আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি চিকিৎসা সূত্র।
গাজার মিডিয়া অফিস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খাদ্যকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনে বলেছে, টানা ৬৩ দিনের অবরোধে ২৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন। ক্ষুধায় মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু, বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সীমান্ত খুলে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে গাজার কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন
এদিকে, ইসরায়েলের অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এপি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ এখন সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু অবরোধের কারণে সেই সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে মার্চ মাসেই ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমিউনিটি কিচেন ও খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হাসপাতালগুলোতেও সীমিত সম্পদ থাকায় কেবল গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার মামলা চলছে।