ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র প্রত্যক্ষ করা এক মার্কিন চিকিৎসক সেখানকার বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলোকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পারমাণবিক বোমায় বিধ্বস্ত হিরোশিমার সাথে তুলনা করে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের তথ্য তুলে ধরেছেন। ডা. ক্লেটন ডাল্টন নামের এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, গাজায় এখন কারও জীবন নিরাপদ নয় এবং হাসপাতালগুলো নিয়মিত বোমা হামলার শিকার হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় অবস্থানকালে ডা. ক্লেটন ডাল্টন মার্কিন ম্যাগাজিন নিউ ইয়র্কারে একটি মর্মস্পর্শী প্রতিবেদনে সেখানকার হাসপাতালগুলোর ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় বিশেষ করে উত্তর গাজার হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যা পারমাণবিক বোমা হামলার পরের হিরোশিমার পরিস্থিতির সাথে তুলনীয়। একটি মেডিকেল টিম নিয়ে খান ইউনিসে গিয়ে নাসের ও কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি জানান, এই দুটি হাসপাতাল ইসরায়েলি হামলায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।
ডা. ডাল্টন সেখানে চিকিৎসকদের ন্যূনতম সরঞ্জাম ও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় অমানবিক পরিস্থিতিতে রোগীদের জীবন বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা দেখেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, গাজার বৃহত্তম চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতাল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এর আশেপাশে গণকবর তৈরি হয়েছে। তার প্রতিবেদনে অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়া যন্ত্রণাদায়ক অস্ত্রোপচার, চিকিৎসার অভাবে অঙ্গচ্ছেদের মতো ভয়াবহ চিত্র এবং ইসরায়েলের নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও উঠে এসেছে। তার মতে, গাজার ৮৪ শতাংশ হাসপাতাল ২০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার যে দাবি করে, তা এই চিকিৎসকের বিবরণীতে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়।
আরও পড়ুন
ডা. ডাল্টন প্রতিবেদনে আহত শিশুদের করুণ অবস্থার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। নয় বছর বয়সী এক শিশুর হাত কেটে ফেলার মতো মর্মান্তিক ঘটনা এবং ত্রাণকর্মীদের শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধারের হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি গাজায় মানবিক সাহায্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে ইসরায়েলের বাধার তীব্র সমালোচনা করেন। ডাল্টন জোর দিয়ে বলেন, হাসপাতালগুলোকে সামরিক কাজে ব্যবহারের ইসরায়েলি দাবি ভিত্তিহীন এবং এই স্থাপনাগুলোতে হামাস বাহিনীর উপস্থিতির কোনো প্রমাণ ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত দিতে পারেনি। এই মার্কিন চিকিৎসক এই পরিস্থিতিকে জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করেন এবং এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা দেখে গভীর বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
আরও দেখুন
