গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনা দেশটির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পূর্বে, কুয়েত এবং অন্যান্য উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা অত্যন্ত বিরল ছিল এবং সাধারণত আদালতের সুস্পষ্ট রায়ের ভিত্তিতে সীমিত সংখ্যক অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য হতো।
তবে, গত ডিসেম্বরে কুয়েতের আইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নৈতিক অবক্ষয় বা অসততার সাথে জড়িত হন, অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ কোনো কার্যকলাপে লিপ্ত হন, এমনকি দেশটির আমির বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সমালোচনা করলেও তার নাগরিকত্ব বাতিল করা যেতে পারে।
কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত একটি সুপ্রিম কমিটি দেশটির নাগরিকত্বের বৈধতা সংক্রান্ত মামলাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতি সপ্তাহে নাগরিকত্ব হারানো ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। এই তালিকা প্রকাশের পর উদ্বিগ্ন কুয়েতি নাগরিকরা গভীর মনোযোগের সাথে সেটি পর্যবেক্ষণ করছেন, এই আশঙ্কায় যে সেখানে তাদের নিজেদের বা তাদের পরিবারের কোনো সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
চলতি মাসের ৬ তারিখে একদিনেই অন্তত ৪৬৪ জন নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-মনিটর জানিয়েছে, এদের মধ্যে ১২ জনকে ‘অবৈধভাবে’ দ্বৈত নাগরিকত্ব ধারণ করার অভিযোগে এবং বাকি ৪৫১ জনকে ‘জালিয়াতি ও প্রতারণার’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কুয়েতে এই ব্যাপক হারে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন