সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতীয় এক নারী শাহজাদীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শিশুর মৃত্যুর দায়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ভারতের উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা শাহজাদী ছোটবেলা থেকেই মুখের পোড়া দাগ নিয়ে ভুগছিলেন। সার্জারির মাধ্যমে সেই দাগ মুছে ফেলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই স্বপ্নের সুযোগ নিয়ে আগ্রার এক ব্যক্তি উজাইর সামাজিক মাধ্যমে তাকে আমিরাতে প্লাস্টিক সার্জারির প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যান।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বৈধ ভিসায় তিনি আবুধাবিতে পৌঁছান। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরিবর্তে তাকে ফাঁদে ফেলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত করা হয়।
২০২২ সালের আগস্টে ফয়েজ নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, যার যত্নের দায়িত্ব দেওয়া হয় শাহজাদীকে। চার মাস পর ৭ ডিসেম্বর শিশুটিকে নিয়মিত টিকা দেওয়ার পর রাতে প্রচণ্ড জ্বরে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন
শোকগ্রস্ত পরিবার শাহজাদীর বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ৩১ জুলাই আদালত মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহজাদী তার পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। তিনি আকস্মিকভাবে জানিয়ে দেন—এটাই তার শেষ ফোনকল। বিষয়টি পরিবারের কাছে ছিল অজানা ও আকস্মিক।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তার দণ্ড বাতিলের জন্য চেষ্টার কমতি ছিল না। তবে আমিরাত প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। শেষ পর্যন্ত, ১৫ ফেব্রুয়ারি আবুধাবিতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, শাহজাদীর বিচার কি ন্যায়সংগত ছিল? তাকে কি আইনগতভাবে যথাযথ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল? ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় প্রচেষ্টাও কেন ব্যর্থ হলো?
এই মৃত্যু শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি অবিচারের প্রতিচ্ছবি—তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।