বাংলাদেশের শ্রমশক্তির জন্য মধ্যপ্রাচ্য বরাবরই প্রধান গন্তব্য। স্বাধীনতার পর থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশি কর্মী উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তবে গত পাঁচ বছরে এই ধারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়া সত্ত্বেও, সৌদি আরব এখনও বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে। সরকারি হিসেবে, গত পাঁচ বছরে ৩৯ লাখ কর্মী বিদেশ গেছেন, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কর্মীর গন্তব্য ছিল সৌদি আরব।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাহরাইন নতুন করে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একই পথে হেঁটেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যারা কার্যত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা প্রদান স্থগিত রেখেছে। ২০২৩ সালে ওমানও তাদের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত করে, যেখানে এখন শুধুমাত্র দক্ষ ও পেশাদার কর্মীরাই সুযোগ পাচ্ছেন। এতে করে সাধারণ শ্রমিকদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বাজার আগের মতো আর সহজলভ্য নেই।
তবে এই সংকটের মধ্যেও সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতের বাজার বাংলাদেশের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। বিশেষ করে সৌদি আরব বর্তমানে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সেখানে নির্মাণ, সেবা ও অন্যান্য খাতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়মিতভাবে কাজ করছেন।
এই প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে। এখন সময় এসেছে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে গুণগত মানোন্নয়নের ওপর জোর দেওয়ার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে এখন দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। তাই বাংলাদেশকে শুধু সংখ্যায় নয়, বরং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন
তাছাড়া, বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজারগুলো পুনরায় চালুর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকারের উচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে নিয়মিত আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে শ্রমবাজারের সমস্যাগুলো সমাধানের পথ খোঁজা।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। শ্রমবাজারের স্থিতিশীলতা এবং একটি টেকসই অভিবাসন নীতি প্রণয়ন তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপই পারে এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে।