দুই দিনব্যাপী একটি বহুল প্রতীক্ষিত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে ইতালিতে, যার উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকত্ব আইন ও শ্রমিক অধিকার সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। তবে মাত্র ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করায় এই গণভোট বাতিল হয়ে যায়। ইতালির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গণভোট বৈধ হতে হলে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি আবশ্যক।
গণভোটে তিনটি মূল প্রস্তাব ছিল: নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষার সময় ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা, শ্রমিকদের অধিক সুরক্ষা প্রদান, এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রস্তাবগুলো পাস হলে প্রায় ২৫ লাখ অভিবাসী, বিশেষ করে বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয়রা, ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথে অগ্রাধিকার পেতেন।
এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে ইতালির ডানপন্থি সরকার ও প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের কড়া বিদেশবিরোধী অবস্থান এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করেছে। ফলে বিশেষ করে প্রগতিশীল ও অভিবাসীবান্ধব ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম।
আরও পড়ুন
এই গণভোট আয়োজন করেছিল ইতালির বাম ও মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং দেশটির প্রভাবশালী শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। তাদের মতে, প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়িত হলে ইতালির আইন ইউরোপীয় মানদণ্ডের সঙ্গে মিল রেখে আরও মানবিক হতো। তারা আশা করছেন, ব্যর্থ হলেও এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের সংস্কার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
ইতালিতে গণভোট নতুন কিছু নয়। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে ৯টি বড় গণভোটের মধ্যে ৮টিই সফল হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ৩৪টি গণভোটের মধ্যে ৩০টিই বাতিল হয়েছে কম ভোটার উপস্থিতির কারণে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার তখনই কার্যকর হয়, যখন জনগণ তা সফল করতে নিজেরা উদ্যোগী হয়। এই ব্যর্থতার মধ্যেও নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।