দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ইউরোপের দ্বীপদেশ সাইপ্রাস। পরবর্তীতে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার সময়ও বহু ইহুদি এই দেশে আশ্রয় নেয়। এমনকি গুজব রয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘাতকালেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সাইপ্রাসে পালিয়ে ছিলেন। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের সম্পর্ক সবসময় ঘনিষ্ঠ ছিল।
তবে ইদানীং দেশটিতে ইসরায়েলি নাগরিকদের রিয়েল এস্টেটে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বামপন্থি রাজনৈতিক দল ‘আকেল’ বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলিরা সাইপ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ও কৌশলগত এলাকায় রিয়েল এস্টেট কিনে ‘গেটেড কমিউনিটি’ গড়ে তুলছে, যেখানে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
‘আকেল’ দল এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় পার্লামেন্টে দুটি বিল উত্থাপন করেছে। এসব আইনের লক্ষ্য হলো ‘গোল্ডেন ভিসা’ ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা ও নজরদারি আনা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা দেশের নাগরিকরা তিন লাখ ইউরোর সম্পত্তি বা শেয়ার কিনে এই ভিসা পায়। আইন সংশোধনের মাধ্যমে ইসরায়েলসহ তৃতীয় দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ভূমি ক্রয়ে লাগাম টানার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
আরও পড়ুন
দলটির নেতা স্তেফানো সাইবিসি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইসরায়েলিরা যেসব জায়গায় জমি কিনছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় গার্ড বা সামরিক স্থাপনার নিকটবর্তী। তার অভিযোগ, সেখানে ইতিমধ্যেই জায়নবাদী স্কুল ও সিনাগগ নির্মাণ শুরু হয়েছে। ফলে সাইপ্রাস যেন ইসরায়েলের একটি ‘ব্যাকইয়ার্ডে’ পরিণত হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ইসরায়েলিরা শুধু লারনাকাতেই ১ হাজার ৪০০টিরও বেশি সম্পত্তি কিনেছে, যার প্রায় ৫০০টির মালিকানা দলিল সম্পূর্ণ হয়েছে। লিমাসোলে তাদের মালিকানায় রয়েছে আরও এক হাজারের বেশি সম্পত্তি। তবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাইপ্রাসের নিজস্ব নাগরিকরাই।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ‘আকেল’। দলটির নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে দেশের মাটি থেকেও সাইপ্রাসবাসীরা বঞ্চিত হতে পারে।