আধুনিক ভ্রমণ ব্যবস্থায় ইন্টারনেট এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করা, রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করা, কিংবা নিছক অবসরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ বোলানো—এমন নানা প্রয়োজনে বহু যাত্রী বিমানবন্দরের বিনামূল্যে প্রদত্ত ওয়াইফাই পরিষেবার ওপর নির্ভর করেন। তবে এই সহজলভ্য ইন্টারনেট পরিষেবাটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর নিরাপত্তার প্রশ্নটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। প্রশ্ন হলো, এই ‘ফ্রি’ ওয়াইফাই কি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য সত্যিই নিরাপদ?
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। তাদের মতে, বিমানবন্দরের মতো জনবহুল স্থানের ফ্রি ওয়াইফাই নেটওয়ার্কগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনক্রিপ্টেড বা সুরক্ষিত থাকে না। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধীরা সহজেই ব্যবহারকারীর ডিভাইসে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। হ্যাকাররা মূলত ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল (MITM)’ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডিভাইস এবং ওয়েবসাইটের মধ্যেকার সংযোগে অনুপ্রবেশ করে তথ্য চুরি করে। এছাড়া, আসল নেটওয়ার্কের নামে নকল ‘ফেইক ওয়াইফাই’ তৈরি করে ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলার ঘটনাও অহরহ ঘটছে।
বিমানবন্দরের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় অনলাইন ব্যাংকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট অথবা ব্যক্তিগত কোনো অ্যাকাউন্টে লগইন করা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে, যেসকল ওয়েবসাইটের শুরুতে ‘https’ নেই, সেগুলোতে পাসওয়ার্ড বা ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এতে তথ্যগুলো সহজেই অপরাধীদের হাতে চলে যেতে পারে। এই “বিনামূল্যের” ইন্টারনেট ব্যবহারের সাময়িক সুবিধা অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্য চুরির কারণে এক ব্যয়বহুল অভিজ্ঞতায় পরিণত হতে পারে।
আরও পড়ুন
তবে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা ব্যবহারকারীর ডেটা এনক্রিপ্ট করে একটি সুরক্ষিত সংযোগ স্থাপন করে। এছাড়া, ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কাজ এড়িয়ে চলা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেকোনো নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার অপশন (Auto-connect) বন্ধ রাখা এবং ডিভাইসের অ্যান্টিভাইরাস ও ফায়ারওয়াল আপডেটেড রাখাও অত্যন্ত জরুরি।
পরিশেষে, বিমানবন্দরের ফ্রি ওয়াইফাই নিঃসন্দেহে একটি সুবিধাজনক পরিষেবা, কিন্তু এর পেছনের নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা প্রত্যেক ভ্রমণকারীর দায়িত্ব। প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করার পাশাপাশি নিজের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হলো স্মার্ট ভ্রমণের অন্যতম চাবিকাঠি। তাই, পরবর্তীবার বিমানবন্দরের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের আগে নিজের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।