মঙ্গল গ্রহে মানববসতি স্থাপনের লক্ষ্যে ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের অন্যতম উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ‘স্টারশিপ’ মঙ্গলবার উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারত মহাসাগরের ওপর বিস্ফোরিত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী এই রকেটটি প্রায় ৪০৩ ফুট (১২৩ মিটার) উঁচু এবং এটি মানব মিশনের প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের স্টারবেস উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে সফলভাবে যাত্রা শুরু করলেও, উৎক্ষেপণের ১০ মিনিট পরেই রকেটটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় বিস্ফোরিত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় ধাপে জ্বালানি লিকের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাইভ সম্প্রচারে দেখা যায়, উপগ্রহ বহনের দরজা খুলতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রকেট ঘূর্ণায়মান হয়ে পড়ায় বিস্ফোরণটি ঘটে।
স্পেসএক্স এটিকে তাদের ভাষায় ‘র্যাপিড আনস্কেডিউলড ডিসঅ্যাসেম্বলি’ হিসেবে অভিহিত করেছে—অর্থাৎ রকেটটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভেঙে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই পরীক্ষার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের সফলতার পথ প্রশস্ত করবে। তারা আরও জানিয়েছে, প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহে একটি করে নতুন উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাছে দক্ষিণ টেক্সাসের সাউথ প্যাদ্রে আইল্যান্ডে এদিন হাজারো দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। ইলন মাস্ক নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ‘অকুপাই মার্স’ লেখা টি-শার্ট পরে। অনেক দর্শনার্থী, এমনকি বিদেশি পর্যটকরাও, রকেট দেখার জন্য পরিবার নিয়ে এসেছিলেন। স্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা এই ঘটনাকে ব্যর্থতা নয়, বরং শিক্ষা হিসেবে দেখছেন।
এটি ছিল স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। রকেটটি প্রথমবার একটি পুরনো বুস্টার ব্যবহার করে সাগরে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়, যা ভবিষ্যতের পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়ক হবে। যদিও পরিবেশবাদীরা অতিরিক্ত উৎক্ষেপণকে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি তুলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) সেই আপত্তি খারিজ করেছে।
সবশেষে, স্পেসএক্স ও ইলন মাস্কের বিশ্বাস, প্রতিটি ব্যর্থতা একটি নতুন ধাপের সূচনা। তাদের লক্ষ্য হলো দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে কার্যকর রকেট নকশা তৈরি করে একদিন মঙ্গলসহ অন্য গ্রহেও মানব বসতি স্থাপন সম্ভব করে তোলা।