যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত পঞ্চম দফার পরমাণু আলোচনা ওমানের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয়পক্ষই আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে মন্তব্য করলেও বাস্তবিক অগ্রগতি চোখে পড়েনি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাঁচটি প্রধান ইস্যু এই আলোচনা বারবার অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে গোপনে অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে। অপরদিকে, ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেও তেহরান এই বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়—ফলে আলোচনা মূলত এই দ্বন্দ্বেই আটকে আছে।
দ্বিতীয়ত, আলোচনার পরিধি নিয়েও রয়েছে মতপার্থক্য। ইরান চায় আলোচনার বিষয় শুধু পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সীমিত থাকুক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মিত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রমকেও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। ইরান একে তাদের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
আরও পড়ুন
তৃতীয় কারণটি হচ্ছে—আলোচনার সমান্তরালে ইরানের ওপর ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ। সম্প্রতি ইরানের নির্মাণ খাতকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, এর আগে জ্বালানি খাতেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা ইরানে মার্কিন সদিচার ওপর প্রশ্ন তুলেছে এবং আলোচনার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে।
চতুর্থত, সামরিক হুঁশিয়ারি ও পাল্টা বক্তব্য আলোচনার বাইরে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেওয়া হলে, ইরান কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সতর্ক করেছে—যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
শেষত, তৃতীয় পক্ষগুলোর চাপ ও প্রভাবও আলোচনার গতিপথকে প্রভাবিত করছে। ইসরাইল ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো আলোচনায় পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ তেহরানের। বিশেষ করে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা আলোচনার আস্থা সংকট বাড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা আপাতত স্থবির হয়ে আছে। সমঝোতার পথ যতই সংকুচিত হোক, দুই দেশই এখনো আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে, যা কূটনৈতিক মহলে সামান্য হলেও আশার আলো জ্বেলে রেখেছে।