প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বের সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটি পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ প্রায় সারা বিশ্বেই নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়।
তবে এই দিবসের পেছনে রয়েছে আনা জারভিস নামের এক নারীর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অবিচল প্রচেষ্টা ও ভালোবাসার ইতিহাস।
যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসের আধুনিক রূপের সূচনা হয়। ১৯০৮ সালের ১২ মে আনা জারভিস প্রথম তার মায়ের স্মরণে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনে মা দিবস পালন করেন। এরপর তার দীর্ঘ প্রচারণার মাধ্যমে ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন
আনা জারভিসের মা অ্যান জারভিস ছিলেন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন ও কনফেডারেট সেনাদের মধ্যে বন্ধনের প্রতীক হিসেবে তিনি “মাদার্স ফ্রেন্ডশিপ ডে” উদযাপন করতেন। ছোটবেলায় মায়ের একটি প্রার্থনা আনার হৃদয়ে গেঁথে যায়: “আমি আশা করি, কোনো একদিন কেউ একজন এমন একটি মা দিবস প্রতিষ্ঠা করবে, যেটি মায়েদের সেবার জন্য স্মরণ করবে।”
মায়ের মৃত্যুর পর আনা জারভিস সেই প্রার্থনাকে বাস্তব রূপ দিতে চিঠি লেখা, জনসভা আয়োজন ও প্রচারণা শুরু করেন। তিনি মা দিবসকে একটি “ব্যক্তিগত ও আন্তরিক দিবস” হিসেবে চেয়েছিলেন—যেখানে পরিবার একত্র হবে এবং মাকে সম্মান জানাবে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মা দিবস একটি বাণিজ্যিক উৎসবে পরিণত হয়। ফুল, কার্ড ও উপহারের আদান-প্রদান এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে এবং এটি বিশাল বাণিজ্যে পরিণত হয়। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর ১০ কোটিরও বেশি মা দিবসের কার্ড বিক্রি হয়।
দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণ দেখে আনা জারভিস গভীরভাবে হতাশ হন। তিনি এক পর্যায়ে এই বাণিজ্যিক রূপের বিরোধিতা করে বলেন, “যারা লোভের মাধ্যমে এই মহৎ আন্দোলনকে ধ্বংস করছে, তারা প্রতারক, ডাকাত ও ঘুণপোকা।” জীবনের শেষ দিকে তিনি নিজেই এই দিবসটি বিলুপ্ত করার আহ্বান জানান।
আজ বিশ্বজুড়ে মা দিবস বিভিন্ন আয়োজনে পালিত হলেও, এর পেছনের ত্যাগ ও ভালোবাসার জন্য আনা জারভিস ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।