আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে ফেসবুকে ইসরায়েলি বসতির প্রচার

আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে ফেসবুকে ইসরায়েলি বসতির প্রচার

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারদের অবৈধ বসতির বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ফেসবুক! শুধু তাই নয়, গাজায় মোতায়েন করা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য অর্থ সহায়তা সংগ্রহের বিজ্ঞাপনও দেখা গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকে শতাধিক উগ্র জায়নবাদী বিজ্ঞাপন দেখা গেছে, যার মধ্যে ইসরায়েলি প্রশাসনের প্রতি ফিলিস্তিনিদের অবকাঠামো ভেঙে ফেলারও আহ্বান ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এসব বিজ্ঞাপনের প্রচার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে অন্তত ৫০টি বিজ্ঞাপন ছিল ইসরায়েলি বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির। তারা মূলত পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইসরায়েলি বসতির আবাসন বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো এই বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করা হয়, যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান তীব্রতর হচ্ছিল।

বিজ্ঞাপনগুলোর প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি নাগরিকরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যবহারকারীর কাছেও এসব বিজ্ঞাপন পৌঁছেছে। বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে ছিল ‘রামাত আদেরেত’ নামের একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি অর্থায়ন করছে ইসরায়েলের ‘ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক’, যা বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট ও স্যাংকশন (BDS) আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে আসছে।

রামাত আদেরেতের প্রকল্পটি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সীমানা নির্ধারণকারী গ্রিন লাইনের ২০ কিলোমিটার পূর্বে দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত। তাদের পৃথক দুটি প্রকল্পের আওতায় সেখানে প্রায় ২৭টি বিলাসবহুল ভবন তৈরি করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের বিজ্ঞাপন ইস্যুতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেয়নি। তবে গাবাই রিয়েল এস্টেট নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আল-জাজিরাকে জানিয়েছে যে তাদের বাজেট স্বল্পতার কারণে ৪৮টির বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইয়ানিভ গাবাই বলেছেন, “যত বেশি ইহুদি পশ্চিম তীরে ফিরবে, আমাদের বাজেট তত বাড়বে এবং আমরা আরও বিজ্ঞাপন দিতে পারব।”

আল-জাজিরার অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, এসব বিজ্ঞাপনের অন্তত ৫০টি ছিল কট্টর ডানপন্থী রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ‘রেগাভিম’-এর। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ, যিনি ২০২৩ সালে ঘোষণা দেন যে পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের জন্য আর কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

রেগাভিমের বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনেই ফিলিস্তিনি অবকাঠামো ধ্বংসে ইসরায়েলি প্রশাসন ও দখলদারদের উৎসাহিত করা হয়েছে। একটি বিজ্ঞাপনে একটি ফিলিস্তিনি স্কুল ধ্বংস করার ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়। অন্য একটি বিজ্ঞাপনে পশ্চিম তীরের একটি ওয়াটার পার্ক ভেঙে ফেলার দাবি জানানো হয়েছে। সেখানে লেখা ছিল—“আমাদের টাকায় ফুর্তি করছে ফিলিস্তিনিরা।”

স্কুল ধ্বংসের ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নিন্দা জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, এটি বৈষম্যমূলক এবং শিশুদের শিক্ষার অধিকারের লঙ্ঘন।

আরও দেখুন

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Probashir city web post