স্পেনে বাড়ছে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার

স্পেনে বাড়ছে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার

আবেদনের জটিল প্রক্রিয়া, দীর্ঘ অপেক্ষার সময় এবং আশ্রয়ের স্বীকৃতি পাওয়ার নিম্ন হারের কারণে অভিবাসন সহায়ক সংস্থা এবং অধিকারকর্মীরা স্পেনের আশ্রয় নীতিকে অত্যন্ত কঠোর বলে মনে করেন।

মাদ্রিদভিত্তিক অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, স্পেন এখন আশ্রয়ের চেয়ে শ্রমভিত্তিক অভিবাসনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

সেনেগালের কাসামান্স অঞ্চল থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী ওসমান বলেন, “এক বছর আগে এখানে এসে আমি আশ্রয়ের আবেদন করেছিলাম। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এটি ছিল একটি স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত।”

ওসমানের মতো অনেকেই প্রতি বছর স্পেনে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আবেদন করেন। শুধু ২০২৫ সালের শুরুতেই ২৬,৪০০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে, যার বেশিরভাগই ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া এবং মালি থেকে এসেছে।

২০২৪ সালে মোট আবেদন সংখ্যা ছিল ১,৬৭,৩৬৬টি, যা স্পেনে আশ্রয় ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। তবে, চাহিদার তুলনায় আবেদন প্রক্রিয়া এখনও সহজ নয়।

ওসমান বলেন, “আমি যখন ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের তেনেরিফে পৌঁছাই, তখন আবেদন করতে চাইলে আমাকে বলা হয়, এটি মূল ভূখণ্ডে করতে হবে। পরে মাদ্রিদে গেলে আমাকে আবার বলা হয়, আবেদন তেনেরিফেই করতে হবে। বিষয়টি খুবই বিভ্রান্তিকর ছিল।”

আবেদনকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষা এবং মানসিক চাপ:

আরেক সেনেগালিজ অভিবাসী আবদুল্লাহ ২০২৪ সালের আগস্টে মাদ্রিদের কাছাকাছি একটি কেন্দ্রে পৌঁছান। তিনি জানান, “আমি প্রথম দিনই আবেদন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে বলা হয়, অনেকেই আগে থেকে অপেক্ষায় আছেন। কিছু না করে সময় কাটানো খুব কঠিন ছিল।”

ছয় মাস পর, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি তার আবেদন জমা দিতে সক্ষম হন।

মাদ্রিদভিত্তিক এনজিও সেয়ার-এর পরিচালক মরিসিও ভালিয়েন্তে বলেন, “আশ্রয় প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করাই সবচেয়ে কঠিন ধাপ। প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগগুলো চাপে পরিপূর্ণ। অনেক আবেদনকারী এক বছর ঘুরেও শুধু আবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হন।”

আবেদন জমা দিলেও সুরক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। ২০২৩ সালে স্পেনের আশ্রয় অনুমোদনের হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, যা ইউরোপের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালে এটি কিছুটা বেড়ে ১৮.৫ শতাংশ হয়েছে, যা ইউরোপীয় গড় ৪২ শতাংশের চেয়ে অনেক কম।

মরিসিও ভালিয়েন্তে মনে করেন, এই পরিসংখ্যান স্পেনের কঠোর আশ্রয় নীতির প্রতিফলন। সবচেয়ে বেশি আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে কলম্বিয়া, পেরু, মরক্কো, সেনেগাল এবং হন্ডুরাস থেকে আসা ব্যক্তিদের। অন্যদিকে, মালি, ভেনেজুয়েলা, সোমালিয়া এবং সুদান থেকে আসা আবেদনকারীদের গ্রহণযোগ্যতার হার ৯০ শতাংশের বেশি।

অভিবাসন আইনজীবী আনা আলানিওন বলেন, “যুদ্ধ বা সহিংসতা ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না। নিপীড়ন বা বৈষম্যের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব কমই গুরুত্ব পায়।”

কমপ্লুতেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এলিসা ব্রেয় বলেন, “স্পেন কখনোই সুইডেন বা জার্মানির মতো শরণার্থীভিত্তিক দেশ ছিল না। বরং দেশটি বরাবরই শ্রমের ভিত্তিতে অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্পেন ছিল একনায়কতান্ত্রিক। এরপর ৯০ দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়ে আশ্রয় আইন বাধ্যতামূলক হয়।”

যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তাদের জন্য ‘আরাইগো’ নামে একটি বিশেষ রেসিডেন্স পারমিট রয়েছে। তবে, এর জন্য স্পেনে কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর অনিয়মিতভাবে বসবাসের প্রমাণ দিতে হয়।

যেসব দেশের আবেদন দ্রুত গৃহীত হয়, তাদের অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন।

মালি থেকে আগত ফোফানা জানান, “আমি কখনোই রাস্তায় ঘুমাইনি। সেভিয়া এবং মাদ্রিদের কেন্দ্রে ছিলাম। ২০২৩ সালের আগস্টে রিফিউজি স্ট্যাটাস পাই। এখন আমি স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি। স্পেন আমি কখনও ছাড়ব না।”

আরও দেখুন 

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize