সম্প্রতি মহাকাশে চীন-আমেরিকার প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে বৈদ্যুতিন যুদ্ধের সম্ভাবনা। আমেরিকার সামরিক সংস্থা ‘স্পেস র্যাপিড ক্যাপাবিলিটিস’ অফিসের ডিরেক্টর কেলি হ্যামেট জানিয়েছেন, চীনের নজরদারি উপগ্রহগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করতে নতুন একটি প্রযুক্তি উন্নয়ন করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি, যা ‘রিমোট মডুলার টার্মিনাল (আরএমটি)’ নামে পরিচিত, মূলত চীনের সামরিক পরিকল্পনা এবং নজরদারি ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করতেই তৈরি।
চীনের ‘ইয়াওগান’ সিরিজের উপগ্রহগুলো দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি ও সামরিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে, চীনের দাবি সত্ত্বেও যে ‘ইয়াওগান-৪১’ উপগ্রহটি শুধুমাত্র জমি জরিপ ও পর্যবেক্ষণের মতো বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়, আমেরিকা অভিযোগ করেছে সেটি বৈশ্বিক পর্যায়ে নজরদারির জন্যই ব্যবহৃত।
চীনের এই কার্যক্রমের জবাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২০০টি শক্তিশালী জ্যামার বসানোর পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে।
আরও পড়ুন
ওয়াশিংটনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, চীনের উপগ্রহগুলো ছোট ছোট যানবাহন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।
এর ফলে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক কার্যক্রম চীনের নজরদারির আওতায় রয়েছে। এই নজরদারি দুর্বল করতেই আমেরিকার নতুন জ্যামার বসানোর উদ্যোগ।
স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের মহাকাশ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ম্যালকম ডেভিস সতর্ক করেছেন, “আমেরিকার জ্যামার বসানোর সিদ্ধান্ত চীনের পাল্টা বৈদ্যুতিন হামলার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
এর ফলে, শুরু হতে পারে এক বৈদ্যুতিন যুদ্ধ, যেখানে কোনও প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার হবে না। পুরোটাই হবে বৈদ্যুতিন প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈদ্যুতিন যুদ্ধের আশঙ্কা শুধু চীন-আমেরিকা দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি আমেরিকা তার জ্যামার সক্রিয় করে, তবে চীন তা প্রতিহত করতে আরও শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এভাবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বড় আকারে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতির এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি নজরদারি ও মহাকাশ নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে ধরছে। চীন ও আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।