বিশ্ব রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার বুদ্ধিমত্তা, প্রভাব ও শাসনক্ষমতা তাকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে। তবে, ইয়াহু নিউজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পুতিন সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত এক নারীকে নিয়ে, যিনি তার শাসনব্যবস্থা ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন।
এই নারীর নাম দারিয়া সেরেনকো। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ঠিক পরদিন, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে তিনি ‘ফেমিনিস্ট অ্যান্টি-ওয়ার রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলন নারীদের যুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে এবং রাশিয়ার অন্তত ৮০টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাসনে থাকলেও সেরেনকো রাশিয়ার পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো ও দমননীতির বিরুদ্ধে সরব রয়েছেন, যা পুতিনের জন্য এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন উপায়ে যুদ্ধবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন—দোকানের ট্যাগে, সামাজিক মাধ্যমে, এমনকি ইউক্রেনীয় নারীদের কষ্টের বর্ণনা দিয়ে চিঠি ও পোস্টকার্ডের মাধ্যমে। তাদের বার্তায় বারবার ফিরে আসে একটিই কথা—যুদ্ধ মানবতা ও বিবেকবোধের বিরুদ্ধে। এই অপ্রচলিত প্রতিবাদ পদ্ধতি পুতিন প্রশাসনের জন্য এক বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন
পুতিন সরকার সেরেনকো ও তার সংগঠনকে কঠোরভাবে দমন করছে। ২০২৩ সালে তাকে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় এবং তার সংগঠনকে ‘অপ্রীতিকর’ ঘোষণা করা হয়, যার ফলে তার ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এর আগেও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। রাশিয়া তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং নতুন পাসপোর্ট দেওয়ায় অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যার ফলে তিনি এখন ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
সেরেনকোর প্রতিবাদ নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে রুশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাকে চাকরি হারাতে বাধ্য করে, কারণ তিনি শাসকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সেরেনকো বলেন, “আমার বস সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন—তুমি যে হাত তোমাকে খাওয়ায়, তাকে কামড়াচ্ছ।” সেই সময় থেকেই শুরু তার জীবনযুদ্ধে এক নতুন অধ্যায়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।