লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সুমন মিয়া নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
লিবিয়ায় থাকা তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে গত ২৮ জানুয়ারি তার মুত্যর বিষয়টি স্বজনেরা নিশ্চিত হন। এরপর থেকে তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। মৃত সুমন পৌর শহরের জগন্নাথপুর লক্ষ্মীপুর এলাকার মাহমুদ হোসেনের ছেলে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতালির স্বপ্ন পূরণে তাদের কারও জমি বিক্রি করতে হয়েছে, সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। তাই ভূমধ্যসাগরে তাদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে পরিবার।
আরও পড়ুন
সুমনের স্বজনেরা জানায়, গত চার মাস আগে ইতালি যেতে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান সুমন। বাড়িতে তার স্ত্রী ও যমজ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি সেখান থেকে ২৫ জন মিলে একটি বোটে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন। এ সময় সুমনসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সুমনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সুমনের স্ত্রী পলি বেগম বলেন, শম্ভুপুর শান্তিপাড়া এলাকার সুইটি নামের দালালের মাধ্যমে আমার স্বামী লিবিয়ায় যান। ২৩ জানুয়ারি আমার সঙ্গে শেষ কথা হয় সুমনের। তিনি বলেছিলেন, ইতালি পৌঁছে ফোন দেবেন। কিন্তু সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা পাঁচ দিন পর জানতে পারি। আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। কত আশা নিয়ে সন্তানদের মুখে হাসি ফুটাব বলে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কে জানতো আমার এই দিন দেখতে হবে। আমার শিশুসন্তানেরা যেন শেষবারের মতো তাদের বাবার মুখ দেখতে পায়।
সুমনের বোন শিল্পী বেগম বলেন, আমার ভাই সংসারের অভাব দূর করতে গিয়ে সে আজ দুনিয়াতে নেই। আমাদের পরিবারের একটাই দাবি সুমন মিয়ার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই। শেষবারের মতো আমার ভাইয়ের মুখখানা দেখতে চাই।
নিহতের বোন শিল্পী বেগম আরও বলেন, আমার ভাই সুমন বাড়িতে থাকাকালীন একটি চালকল চালাত। তার দুই বছরের যমজ ছেলেমেয়ে এবং ১০ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ধারদেনা করে ১৮ লাখ টাকায় ইতালি যেতেই লিবিয়া থেকে ডাঙ্কি দিয়েছিল। প্রথমে দালালপক্ষের লোকজন আমাদের বলে, সবাই ইতালি পৌঁছে গেছে। পরে শুনতে পাই, আমার ভাইসহ সবাই অসুস্থ ছিল। পরে সুমনসহ দুজন মৃত্যুবরণ করেছে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যারা অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে, তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে তাদের সহযোগিতা করে থাকে প্রশাসন। এছাড়া দালালদের শাস্তির আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। মরদেহ ফিরে পেতে তার স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।