চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা চলছে।
বিশেষ করে, বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। এর আগে, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিটিসি) অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেছে সৌদি কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (আরএসজেটিআই)। এছাড়াও, বে-টার্মিনাল এবং লালদিয়ার চরও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আলোচনা চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সরকার সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনসিটিসহ বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়। সরকারের লক্ষ্য হলো, বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলা।
আরও পড়ুন
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল রয়েছে: চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। সিসিটি ও এনসিটি পরিচালনা করছে সাইফ পাওয়ারটেক এবং পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সৌদির আরএসজেটিআই। বে-টার্মিনাল ও লালদিয়ার চরও বিদেশি বিনিয়োগে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরও একই প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিএনপি সরকারের আমলে শুরু হওয়া এনসিটি বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মিত এবং বন্দরের আয়ের একটি বড় অংশ আসে এখান থেকে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এই টার্মিনালটির উৎপাদনশীলতাও অনেক বেশি। তবে, এই টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া বিগত সরকার শুরু করেছিল, যা এখনও চলমান।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, বন্দর শ্রমিক ফেডারেশন, জামায়াতে ইসলামী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর বিরোধিতা করছে। তারা লাভজনক টার্মিনালগুলো বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও, লাভজনক এনসিটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার জানান, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে যাওয়ায় বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজ করার সুযোগ কমে গেছে। এনসিটিও একই পথে গেলে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী তাদের জীবিকা হারাবেন।
তবে, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মরিুজ্জামান জানিয়েছেন, এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি মনে করেন, বিদেশি অপারেটর নিয়োগ করা হলে বন্দরের সেবার মান ও দক্ষতা বাড়বে এবং এতে বন্দরের আর্থিক লাভ হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সরকার বন্দরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে একটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী মনে করেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন এবং এর সাথে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জড়িত। তাই বন্দর নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থে ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত।