ইউরোপে পাঠানোর নামে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা মাহবুব পাঠানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।
মাহবুব পাঠান দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে সেখানকার বেনগাজিতে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করছিলেন। গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির মিডিয়া বিভাগের এসপি আজাদ রহমান।
তিনি জানান, এ চক্রটি বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে আটক করত। এরপর তাদের আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করে এর ভিডিও পরিবারের কাছেপাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত।
মুক্তিপণ আদায়ের পর বিপজ্জনক নৌযাত্রার মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত। ২০২১ সালের ১৭ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহবুব পাঠানের চক্রের শিকার ৬৪ বাংলাদেশিসহ ১০৪ জন অভিবাসী ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন।
আরও পড়ুন
পরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় তিউনিসিয়ায় থাকা এসব বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন মিলন বেপারী (২৩)। তিনি দেশে ফিরে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় একটি মানব পাচার আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডি তদন্তে জানতে পারে, চক্রটি মিলন বেপারী ও অন্যান্য ভুক্তভোগীকে এমিরেটস বিমানে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজি নিয়ে যায়।
সেখানে মূলহোতা মাহবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা ক্যাম্পে তাদের আটক রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন করে। পরে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
২০২১ সালের ২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচি মনি বেগম চক্রটির সদস্যদের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় তিন লাখ টাকা দেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়।
এরপর মাহবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা সুকৌশলে বাদীসহ অন্যান্য ভিকটিমকে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলিতে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য মনিরের ক্যাম্পে পাঠায়।
সেখানে বাদী ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে আটক করে দ্বিতীয় দফায় শারীরিক নির্যাতন করে টাকা দাবি করে। ২০২১ সালের ১২ মে ভুক্তভোগীর মা বিউটি আক্তার ও চাচি মনি পুনরায় হেনা বেগমের কাছে চার লাখ টাকা দেন।
১৫ দিন সেখানে আটকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় (বাতাসে) ভাসা একটি প্লাস্টিক নৌকায় আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলনকে তুলে দেওয়া হয়।