সৌদি চাপে সরকার

Government under saudi pressure

সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিতে চাপ দিয়ে আসছে সৌদি সরকার। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি আবারও গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। সৌদি আরব আশ্বস্ত করেছে, পাসপোর্ট নবায়নের পর ওই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।

তবে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে বেশ জটিল ও সংবেদনশীল হিসেবে দেখছে। সরকারের অবস্থান হলো, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তারা কেবল মানবিক কারণে আশ্রয়প্রাপ্ত। পাসপোর্ট নবায়ন মানে পরোক্ষভাবে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, যা দেশের নিরাপত্তা, কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে সৌদি আরব মানবিক বিবেচনায় এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। পরে অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন এবং সৌদি আরবে অবস্থান করতে থাকেন। পাসপোর্ট নবায়নের সময় এদের মধ্যে অনেকে আটকও হয়েছেন, যাদের পরিচয়পত্র ও ভিসা ছিল জাল। সৌদি সরকার বারবার দাবি করে এসেছে, যেহেতু তাদের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে, তাই তারা বাংলাদেশের নাগরিক।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনও (ইসি) রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার পথ বন্ধে কঠোর হয়েছে। দিনাজপুর ও নীলফামারীতে ভুয়া তথ্য দিয়ে অন্তত ২২ রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন, যাদের এনআইডি বর্তমানে লক করা হয়েছে। ইসি জানায়, রোহিঙ্গা সংক্রান্ত ডেটাবেজ তাদের হাতে না থাকায় তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে পাসপোর্ট নবায়নের প্রস্তাব প্রথম আসে ২০১০ সালে। এরপর ২০১৯ সাল থেকে এ নিয়ে আলোচনার মাত্রা বাড়ে। ২০২২ ও ২০২৪ সালে উচ্চ পর্যায়ের সৌদি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসে আবারও চাপ বাড়ায়। এমনকি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ বিষয়ে পুনরায় অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার আগে তাদের পরিচয় যাচাই করা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পাসপোর্ট নবায়নের পরিবর্তে ট্রাভেল পারমিট বা বিশেষ ওয়ার্ক পারমিট বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু একবার পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে, নবায়নে আইনি জটিলতা আছে। তবে নাগরিক স্বীকৃতি না দিয়ে শর্তযুক্তভাবে বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর মনে করেন, যদি প্রথমবার পাসপোর্ট বৈধভাবে ইস্যু হয়ে থাকে, তবে নবায়ন আইনি বাধ্যবাধকতা। তবে কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। সবমিলিয়ে সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিচয়, অবস্থান ও নাগরিকত্ব ঘিরে এক জটিল কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।

আরও দেখুন:

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize