বিদেশে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন পরিবার ও নিজ সমাজ থেকে দূরে থাকার কারণে অনেক প্রবাসী নানা মানসিক চাপে ভুগছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংস্কৃতিক পার্থক্য, আত্মপরিচয়ের সংকট এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, যা মানসিক অস্থিরতা ও বিষণ্নতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
প্রবাসীরা প্রায়শই কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন, ফলে ব্যক্তিগত জীবনে একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা প্রবল হয়ে ওঠে। কাজের চাপ এবং অবসরের সময় সঙ্গীর অভাবে তাদের মানসিক ভারসাম্য ব্যাহত হয়। এই পরিস্থিতি হতাশা, ঘুমের সমস্যা, অতিরিক্ত রাগ, আত্মবিশ্বাসের অভাবসহ বিভিন্ন মানসিক জটিলতার জন্ম দেয়।
নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে গিয়ে অনেকেই ভাষাগত সমস্যা, সামাজিক রীতিনীতির ভিন্নতা এবং সংস্কৃতি নিয়ে সংকটে পড়েন। পরিচিত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া প্রবাসীরা নিজেদের অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নিতে গিয়ে এক ধরনের ‘পরিচয় সংকটের’ ভেতর দিয়ে যান, যা মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন
বিশেষ করে যারা একা থাকেন, যাদের সামাজিক সংযোগ কম এবং যারা অতিরিক্ত কর্মচাপে থাকেন, তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে অনেকেই সামাজিক লজ্জা ও ভুল ধারণার কারণে চিকিৎসা নিতে দ্বিধাবোধ করেন। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতার অভাব এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা সেবার সীমাবদ্ধতা সমস্যা আরও ঘনীভূত করছে।
এই বাস্তবতায় প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সামাজিক সংযোগ বাড়ানো, ভার্চুয়াল সহায়তা চালু করা, প্রবাসীদের জন্য সচেতনতা কার্যক্রম ও সহায়ক কমিউনিটি গঠন মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রবাসী নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্য আর অবহেলার জায়গা নয়। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের মানসিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা সুস্থ, কর্মক্ষম ও সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকতে পারেন।