যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন কলেজছাত্রী নুসরাত জাহান (লিজা)। সৌদি আরব থেকে আনা খেজুর খেয়ে শখের বসে বীজ মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সেই শখ রূপ নিয়েছে একটি পরিপূর্ণ খেজুরবাগানে। বর্তমানে তার এক বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা বাগানে ফল ধরেছে এবং নতুন চারা উৎপাদিত হচ্ছে।
পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলায় প্রতিবেশী দুইজন হজযাত্রী সৌদি আরব থেকে খেজুর এনে দিলে সেগুলোর বীজ মাটিতে পুঁতে দেন নুসরাত। কয়েকদিন পর চারা গজাতে দেখে তার আগ্রহ বাড়ে। গাছগুলোর যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ইউটিউব দেখে ধাপে ধাপে বাগান তৈরির কলাকৌশল শিখতে থাকেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি খেজুরগাছ, যেগুলোর গোড়া থেকে নতুন চারাও উৎপন্ন হচ্ছে।
আরও পড়ুন
নুসরাত জানান, তার বাগানে সৌদি আরবের জনপ্রিয় আমবার, আজোয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুর রয়েছে। গাছে ধরা খেজুর ইতোমধ্যেই হলুদ থেকে লালচে রঙ ধারণ করেছে এবং খেতেও বেশ মিষ্টি। তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই খেজুর স্থানীয় বাজারেও ভালো মূল্য পাবে।
নুসরাতের বাবা আবদুল লতিফ, যিনি পল্লী বিদ্যুতের সাবেক টেকনিশিয়ান, অবসরের পর মেয়ের খেজুরবাগানে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন। তিনি জানান, মরুভূমির আবহাওয়া অনুকরণে প্রতিটি গাছের গোড়ায় বালু, জৈবসার ও ইউরিয়া মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছে। পরাগায়ন প্রক্রিয়াও বিশেষভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে যাতে গাছে ফল ধরে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ইরফান মোড়ল বলেন, ‘এখানে সৌদি খেজুর উৎপাদন হচ্ছে—এটা খুবই বিস্ময়কর। খেজুর খেয়েছি, অনেক সুস্বাদু। এখান থেকে চারা তৈরি হয়ে বিক্রিও হচ্ছে।’ নুসরাতের পরিবার জানায়, একেকটি চারা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, আর বীজ থেকে উৎপন্ন চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বাগানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। যথাযথ পরিচর্যা অব্যাহত থাকলে এই উদ্যোগ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে। নুসরাতের এই প্রচেষ্টা স্থানীয় কৃষিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।