বিদেশের মাটিতে পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২১ দিনেই তারা দেশে পাঠিয়েছেন ২০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এই অর্থ যেন শুধু টাকা নয়—এটি প্রবাসীদের পরিবারের জীবনের প্রয়োজন মেটানোর অন্যতম মাধ্যম। এটি মায়ের মুখের হাসি, সন্তানের স্কুলের বেতন, বাবার ওষুধের খরচ আর পুরো পরিবারের জীবিকা নির্বাহের মূল শক্তি। দেশের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে বিবেচিত এই রেমিট্যান্স প্রবাহ জাতীয় রিজার্ভকে যেমন চাঙা রাখছে, তেমনি সামষ্টিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি ফিরিয়েছে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা, প্রবাসীদের ব্যাংকিং সুবিধা সহজীকরণ এবং হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এই সফলতায় ভূমিকা রেখেছে।
আরও পড়ুন
তবে এই আর্থিক প্রবাহের পেছনে আছে হাজারও পরিশ্রম ও ত্যাগের গল্প। মধ্যপ্রাচ্যের তপ্ত রোদে কাজ করা নির্মাণশ্রমিক, গার্মেন্টসে রাতদিন পরিশ্রমরত নারী কর্মী কিংবা মালয়েশিয়া বা ইউরোপে দিনভর খেটে যাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের ঘামই এই অর্জনের ভিত্তি।
একজন প্রবাসী রিয়াজ আহমেদ বলেন, “দেশে মা আছেন। মাস শেষে টাকা পাঠাতে পারলে মনে হয়, আমি কিছু একটা করতে পারছি। ঘরে না থেকেও যেন ঘরের পাশে আছি।” সরকারের পক্ষ থেকেও প্রবাসীদের আরও উৎসাহ দিতে সহজ রেমিট্যান্স প্রেরণব্যবস্থা এবং নগদ প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এই রেমিট্যান্স শুধু অর্থনৈতিক নয়—এ যেন অদৃশ্য ভালোবাসার এক চিঠি, যা প্রতিদিন হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পৌঁছে যায় প্রিয় মাতৃভূমিতে।