ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সামরিক ও বেসামরিক বিমান একসঙ্গে একই রানওয়ে ব্যবহার করছে। যা আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন নীতিমালার পরিপন্থী হলেও দেশের ভৌগোলিক ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটি বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। সাবেক সামরিক পাইলটরা বলছেন, পৃথক সামরিক সুবিধা গড়ে তুলতে জায়গা ও অর্থের অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই এই একত্র ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই চলছে উড়োজাহাজ চলাচল, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি।
শাহজালাল বিমানবন্দর ঘিরে এখন গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক স্থাপনা, শিল্পকারখানা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমানবন্দর পরিচালনা করলে যেকোনো দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। সম্প্রতি উত্তরায় একটি সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা এই উদ্বেগকে আরও ঘনীভূত করেছে। এতে করে জননিরাপত্তা এবং যাত্রীসেবায় উদ্বেগ বেড়েছে খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক আগেই ঢাকার বাইরে নতুন বিমানবন্দর স্থাপন করা উচিত ছিল। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, আরিয়াল বিল এলাকায় বিমানবন্দর স্থানান্তরের পরিকল্পনা থাকলেও স্থানীয় রাজনৈতিক চাপের কারণে সেটি থেমে যায়। আজও সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি, ফলে একই জায়গায় সামরিক ও বেসামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেই হচ্ছে।
আরও পড়ুন
একটি মাত্র রানওয়ে থেকে সামরিক ও বেসামরিক উড়োজাহাজ পরিচালনার ফলে শুধু নিরাপত্তা নয়, সময় ব্যবস্থাপনাতেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সাবেক পাইলটরা জানান, অনেক সময় যাত্রীদের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত টেক-অফের অপেক্ষায় বিমানে বসে থাকতে হয়। ফলে ফ্লাইট শিডিউল এলোমেলো হয়ে পড়ে, যাত্রীসেবা ব্যাহত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক ফ্লাইট কার্যক্রম অন্য বিমানবন্দরে স্থানান্তরের চিন্তা করা এখন সময়ের দাবি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর তুলনামূলকভাবে জনবহুল এলাকায় নয়, আবার সমুদ্রসন্নিকট হওয়ায় এটি একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে। যদিও এই ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বড় পরিসরের বিনিয়োগ প্রয়োজন, তবুও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনায় এখনই সেই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।